আমাদের ‘অনলাইন’ ও ‘অফলাইন’ জীবনের মধ্যে এখন আর খুব একটা পার্থক্য নেই। সামাজিক মেলামেশা, কেনাকাটা করা, গেম খেলা, কাজ করা ও শেখা সবকিছুই এখন দুটি জায়গাতে এবং প্রায়শই একই সময়ে করা হয়। এর ফলে অনলাইনের কোনো কিছু আমাদের ভালো থাকাকে প্রভাবিত করলে, তা শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কিশোর-কিশোরীদের জন্য আত্ম-সচেতনতা আবশ্যক। তাদের মেজাজের উপর এর প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করতে শিখলে, তারা ভালো থাকার ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবে। এটি তাদের মধ্যে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করার ক্ষমতা গড়ে তোলে এবং নিজেদের জীবনের নিয়ন্ত্রণ যে তাদের হাতেই আছে একথা অনুভব করার ক্ষেত্রে সহায়তা করে।
এটা রাতারাতি ঘটা সম্ভব নয়, তবে কিশোর-কিশোরী সন্তানদের সহায়তার জন্য মা-বাবারা বহু ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারেন: যেমন অনলাইন থাকতে তাদের কেমন লাগছে তা বোঝা থেকে শুরু করে, তাদের আত্মসম্মান বাড়ানোই হোক বা চ্যালেঞ্জিং কোনো কাজের সঙ্গে তুলনা করার মতো অনেক কিছু করা যেতে পারে।
আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তান Instagram-এ কতক্ষণ সময় কাটান এবং তিনি সেখানে কী করতে পারেন, তা ইতিমধ্যেই হয়তো আপনি জানেন। তবে তার ভালো থাকার ক্ষেত্রে, আপনি হয়ত সেই সমস্ত প্রশ্নগুলো এড়িয়ে গেলে ভাল করবেন যেগুলির উত্তর আপনি আগে জানতে চেয়েছেন (যেমন, কতক্ষণ ধরে স্ক্রীনের সামনে সময় কাটাচ্ছে বা ডিভাইস ব্যবহার করছে)। পরিবর্তে, এই প্রশ্নগুলো করে দেখুন:
সবকটি প্রশ্নের উত্তর হয়তো আপনি সাথে সাথে নাও পেতে পারেন এবং তিনি এগুলো আপনার সাথে আলোচনা করতে নাও চাইতে পারেন। তিনি নিজে থেকে আত্মবিশ্বাসের সাথে কোনো সমস্যা শনাক্ত নাও করতে পারেন।
আপনি শারীরিক, মানসিক বা আচরণগত কিছু ইঙ্গিত লক্ষ্য করতে পারেন যেমন:
এগুলো হঠাৎ করে বা সময়ের সাথে ধীরে ধীরে দেখা যেতে পারে, যা ইঙ্গিত করে যে সবকিছু হয়ত ঠিকঠাক নেই।
অবশ্যই, এগুলো বয়ঃসন্ধি কালের মধ্য দিয়ে যাওয়া সব কিশোর-কিশোরীর স্বাভাবিক পরিবর্তনের লক্ষণও হতে পারে। এই কারণেই মা বা বাবা হিসাবে আপনার কী মনে হচ্ছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই নিজের সহজাত বুদ্ধির উপর ভরসা রাখুন।
আপনার কিশোর বয়সী সন্তান কি নিজের সম্পর্কে ইতিবাচক কথা বলেন? নাকি তিনি তার (আপাতভাবে মনে হওয়া) দোষগুলোকে হাইলাইট করেন অথবা নিজেকে অন্যদের থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন?
আত্মসম্মান কমে যাওয়া অনেক কিছু ইঙ্গিত করতে পারে, এর মধ্যে একটি হলো, তার ডিজিটাল সুস্থতা হয়ত ঠিকঠাক নেই।
সহজে ও স্বাভাবিকভাবেই তিনি আয়নায় নিজের সঙ্গে অনলাইনে থাকা অন্যদের তুলনা করে ফেলতে পারেন। তবে তার সোশ্যাল মিডিয়ার ফিডে দেখা মুখগুলো প্রকৃতপক্ষে বাস্তব নাও হতে পারে। ছবির ফিল্টার ও এডিটিং এখন এতই সূক্ষ্ম হয়ে গেছে, যে কোনটি ‘আসল’ তা চিহ্নিত করা মুশকিল।
আপনি হয়ত খেয়াল করবেন, আপনার কিশোর বয়সী সন্তান তার সেলফির পরিবর্তিত রূপ পোস্ট করছেন এবং সেটিকে আত্ম-সমালোচনা হিসাবে ব্যাখ্যা করছেন। আমাদের সুন্দর দেখতে লাগুক, সেটা আমরা সবাই চাই, এতে অস্বাভাবিক কিছু নেই, তবে এর মানে এটাও হতে পারে যে তিনি অনলাইনে যা দেখেন, তার সাথে তাল মিলিয়ে চলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।
কিশোর-কিশোরীদের এও মনে হতে পারে যে সবার মতোই তাদেরও প্রচুর ‘লাইক’ পেতে হবে এবং ছবিতে বা কনটেন্টে বেশ ভালো রকমের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া না পেলে, তারা সেগুলো মুছে ফেলতে ও সরিয়ে দিতে পারেন। Instagram ও Facebook-এ এখন লাইকের সংখ্যা লুকানোর বিকল্প সুবিধা পাওয়া যায় এবং এই সুবিধা আপনার ফিড ও আপনার ব্যক্তিগত পোস্ট দুই ক্ষেত্রেই পাওয়া যায়।
যদি আপনার অস্বাভাবিক কিছু মনে হয় তাহলে, আপনার কিশোর বয়সী সন্তানকে মনে করিয়ে দিন যে তিনি চাইলেই পরিস্থিতি পাল্টাতে পারেন।
অনলাইনে আমরা যা দেখি তা ধীরে ধীরে কীভাবে আমাদের অনুভূতির উপর প্রভাব ফেলে, তা বিবেচনা না করেই পরোক্ষভাবে গ্রহণ করে নিতে পারি। তিনি যদি এমন কিছু না দেখেন, যা তার নিজের সম্পর্কে ভালো ভাবতে সাহায্য করে, তাহলে হয়ত তিনি কাকে ও কী ফলো করছেন বা কতটা ফলো করছেন, তা রিভিউ করা উচিত।
কখনও কখনও সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সাময়িক বিরতি নিলেও সেই সমস্যা সহজে মিটে যেতে পারে। এটি পরিচালনা করার জন্য সাহায্য পেতে, কিশোর-কিশোরী ও বাবা-মা উভয়েই Instagram-এ স্ক্রিনটাইম নিয়ন্ত্রণ ব্যবহার করতে পারেন।
Instagram-এ কিশোর-কিশোরীদের সুস্থতাকে সুরক্ষিত রাখার ক্ষেত্রে, শক্তিশালী টুলগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো "আনফলো করুন" বোতাম। আপনার কিশোর বয়সী সন্তানের ফিডকে তার কিউরেট বা সংগ্রহ করা নিজস্ব জায়গা হিসাবে দেখতে এবং ‘ফলো’ করাকে তার ভালো লাগা ও পছন্দের কনটেন্টের প্রতি একটি ভোট হিসাবে দেখতে উৎসাহিত করুন।
আত্মসম্মান খুবই সংবেদনশীল বিষয় এবং কিশোর-কিশোরীরা কোনো কারণে নিজের সমালোচনার বিষয়ে চিন্তিত থাকার সময় নিজের প্রশংসা শুনলে, তার পক্ষে তা গ্রহণ করা কঠিন হতে পারে।
কোনো শান্ত মুহূর্তে, অন্য কোনো কাজ করার সময় আপনার উদ্বেগের প্রসঙ্গ তুলুন ও সেই বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করুন। তিনি কথা বলতে না চাইলে, জোর করবেন না। তবে অন্য কোনো উপযুক্ত সময়ে, আবার চেষ্টা করে দেখুন।
আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তান যাতে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার পরিচালনা করতে পারেন, তার জন্য নিজে কিছু দৃষ্টান্ত তৈরি করেও তাকে সাহায্য করতে পারেন। ঘুম, ব্যায়াম ও ঠিকভাবে খাওয়া দাওয়া করার মতো স্বাস্থ্যকর অভ্যাসকে অগ্রাধিকার দিন। পরিবারের জন্য প্রযুক্তিগত কোনো নিয়ম স্থির করলে (যেমন, ডিনার টেবিলে ডিভাইস ব্যবহার না করা), নিজেও সেগুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন।
আপনি নিজের কল্যাণ ও সুস্থতার জন্য যা যা উপায় মেনে চলেন, তা শেয়ার করতে পারেন – যেমন আপনার আনফলো করা কোনো অ্যাকাউন্টের কথা অথবা আপনাকে ভালো থাকতে সাহায্য করে এমন কোনো অ্যাকাউন্টের কথা উল্লেখ করা। এমন ঘটনার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কথোপকথনের মতো না জানিয়ে, সাধারণ কথা প্রসঙ্গে বলার মতো করে বলুন।
কোনো কারণে আপনার নিজের কল্যাণ ও সুস্থতায় বাধা পড়লে, সেই বিষয়েও তার সাথে কথা বলতে পারেন। কেউই 100% অর্থাৎ সব সময়ে সঠিক আচরণ করতে পারেন না। এটিকে যে খারাপভাবেই নিতে হবে তার কোনো কারণ নেই: আপনার কিশোর বয়সী সন্তানকে বোঝান যে আপনি সেটি চিহ্নিত করে সেই ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পারেন।
সহনশীলতার একটি দৃষ্টান্ত দেখান এবং একইভাবে তাকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করুন।
আরও পরামর্শ চান? ফ্যামিলি সেন্টার সংক্রান্ত আরও আর্টিকেল এখানে পড়ুন।