অনলাইনে আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তানের স্বাস্থ্যকর অভ্যাস কীভাবে গড়বেন

NAMLE

13 জুন, 2022

মা-বাবারা তাদের কিশোর-কিশোরী সন্তানদের রক্ষা করতে এবং তাদের নিরাপদ রাখতে চান। কিন্তু, শুধুমাত্র নিরাপত্তার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার পরিবর্তে, আমরা যদি বাড়িতে মিডিয়া ও প্রযুক্তির সাথে এক স্বাস্থ্যকর ও ফলপ্রসূ সম্পর্ক গড়ে তোলার অর্থ সম্বন্ধে আরও বিস্তারিতভাবে চিন্তা করার চেষ্টা করি, তা হলে? কারণ, গত এক দশকে আমাদের প্রযুক্তি ও তথ্যব্যবস্থায় যে পরিবর্তন এসেছে, তার প্রভাব শুধু অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের ওপরই পড়েনি, আমাদের সবার ওপরই পড়েছে। আমরা সবাই এই জটিল বিশ্বে নেভিগেট করতে শিখছি, আর এটা আরো সহজ হবে যদি আমরা একসাথে এটা করার উপায় বের করতে পারি।

আমরা যদি আমাদের বাড়িতে কিভাবে একটি সুস্থ মিডিয়া পরিবেশ তৈরি করা যায় সেদিকে মনোযোগ দিই তাহলে, আমরা শুধু আমাদের পরিবারকে নিরাপদ রাখতেই সাহায্য করতে পারব না, আমরা এই বিস্ময়কর প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সাথে আমাদের কাছে যে সুযোগগুলো রয়েছে তার সদ্ব্যবহার করতেও সক্ষম হব।

আপনার বাড়িতে, মিডিয়ার সাথে সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য 5টি প্রধান পরামর্শ দেওয়া হলো:


  1. আপনার নিজের মিডিয়ার ব্যবহার নিয়ে চিন্তা করুন। আপনি কি স্ক্রীন টাইম (অর্থাৎ মোবাইল বা অন্যান্য ডিভাইস ব্যবহার করার সময়) কমাতে চান? আপনি কি মিডিয়ার ব্যবহারে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন? আপনি কি আপনার ফোন, সোশ্যাল মিডিয়া অথবা ফ্রেন্ডদের সাথে মেসেজ করার কারণে আপনার যে কাজটি করা উচিত সেই কাজটি করতে দেরি করেন? আপনি কি আপনার ফোনটিকে নিজের কাছাকাছি রাখতে পছন্দ করেন? কিশোর-কিশোরীরা মিডিয়া ও প্রযুক্তির ব্যবহার করলে আমরা তাদের প্রতি বাঁকা চোখে তাকাই, কিন্তু আমরা নিজেদের ব্যাপারে চিন্তা করলে দেখব যে আমাদের বড়দের স্বভাবগুলো একদম তাদেরই মতো। এইভাবে চিন্তা করলে দেখবেন যে তাদের প্রতি আমাদের কিছুটা সহমর্মিতা ও বোঝাপড়া গড়ে উঠবে।
  2. বাড়িতে আপনি যে মিডিয়া ব্যবহার করেন তার সম্পর্কে কিছু তথ্য শেয়ার করুন। আমরা মূলত মিডিয়ার সাথে আমাদের বেশিরভাগ সময় কাটায় - তা সে খবরের পডকাস্ট শোনা হোক, খেলাধুলার অনুষ্ঠান দেখা হোক, নতুন স্ট্রিমিং সিরিজ দেখা শুরু করা হোক, বা আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া ফিড স্ক্রল করা হোক - মিডিয়া আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা যে মিডিয়া ব্যবহার করি সেই সম্পর্কে আমাদের কিশোর-কিশোরী সন্তানের সাথে কথা বলা এবং আমরা যে মজার মজার গল্প পড়েছি বা মজার ভিডিও দেখেছি সেগুলো শেয়ার করা আমাদের কিশোর-কিশোরী সন্তানদের সাথে খোলাখুলি আলোচনা করতে সাহায্য করে যে তারা কী দেখছেন, শুনছেন এবং পড়ছেন।
  3. নোটিফিকেশন বন্ধ করুন। আমরা এমন একটি পরিবেশে বসবাস করি যেখানে মিডিয়া আমাদের 24/7 ঘিরে রয়েছে এবং টেক্সট, ইমেইল, সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট এবং ব্রেকিং নিউজ সম্পর্কে ক্রামগত নোটিফিকেশন আসতেই থাকে, যা ক্লান্তিকর হতে পারে।
    অমাদের সংস্কৃতি এমন হয়ে উঠেছে যে, এই মুহূর্তে যা ঘটেছে সেটির বিষয়ে সবকিছু আমাদের এখনই জানা দরকার, কিন্তু আমাদের বিশ্ব এত দ্রুত এগিয়ে চলেছে সেখানে সবকিছুই সাথে সাথে জানা অসম্ভব কাজ। আর তা চরম বিড়ম্বনা হতে পারে! নোটিফিকেশনগুলো বন্ধ করার ফলে আপনি নিউজ এবং আপডেট কখন পেতে চান সে সম্পর্কে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এছাড়াও, আপনার নিজের সীমা নির্ধারণ করলে তা আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তানদেরও একই কাজ করার জন্য উত্সাহিত করতে পারে।
  4. একসাথে আরও বেশি সময় কাটান। অনেক সময় প্রযুক্তি নিয়ে আমাদের কিশোর-কিশোরী সন্তানদের সাথে যে আলাপচারিতা হয় তা এরকম: আপনি কি এক সেকেন্ডের জন্য এই জিনিসটিকে বন্ধ করতে পারেন, যাতে আমি আপনার সাথে কথা বলতে পারি? বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। আমরা এর চেয়ে ভালো কিছু করতে পারি! একটি পরিবার হিসাবে প্রযুক্তি এবং মিডিয়ার মাধ্যমে আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তানের সাথে যুক্ত হওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে৷ প্রথমত, কিশোর-কিশোরীরা প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে খুবই দক্ষ। নতুন প্রযুক্তি শেখার ক্ষেত্রে তাদের অবিশ্বাস্য দক্ষতা রয়েছে, তাই তাদের কাছে সাহায্য চাওয়ার কারণ খুঁজে বের করা নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে আলোচনা করার সুযোগ করে দেয় এবং তাদের এটাও দেখায় যে আপনি তাদের জ্ঞানকে সম্মান করেন। দ্বিতীয়ত, যে-ভিডিও গেমগুলো তারা খেলতে পছন্দ করেন, সেই সম্বন্ধে আপনার কিশোর বয়সি সন্তানের সাথে কথা বলা অথবা তারা যে ছবিটা পোস্ট করেছেন, সেটার প্রশংসা করা হলো প্রযুক্তির ইতিবাচক দিকগুলো এমনভাবে তুলে ধরার একটা উপায়, যাতে আপনার উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করার প্রয়োজন হলে তা হয়তো তাদের কম রক্ষণাত্মক করে তুলতে পারে।
  5. প্রযুক্তির থেকে কিছুটা বিরতি নিন। দিনের মধ্যে কিছুটা সময় কোনো প্রযুক্তি না ব্যবহার করে কাটানো স্বাস্থ্যকর। চিন্তা করুন যে, কীভাবে আপনি প্রযুক্তি ছাড়া পারিবারিক সময় কাটানোর সুযোগ পেতে পারেন। হয়তো রাতের খাবারের সময়। হয়তো রবিবার সকালের প্যানকেক খাওয়ার সময়। হয়তো সপ্তাহে এক রাত যেখানে আপনি 30 মিনিট সবার সাথে বোর্ড গেম খেলেন। প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির বেড়াজালে আবদ্ধ না থেকে পরিবারকে সময় দিলে পারিবারিক সম্পর্কগুলো দৃঢ় হয় এবং আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তানকে বোঝানো যায় যে প্রতিদিন কিছুটা সময় ফোন ব্যবহার না করেও আমরা দিব্যি ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারি।
আপনার লোকেশন হিসাবে নির্দিষ্ট কনটেন্ট দেখতে আপনি কি অন্য কোনো দেশ বা অঞ্চল বেছে নিতে চাইবেন?
পরিবর্তন করুন