মিডিয়া লিটারেট পেরেন্টিং

Meta

14 মার্চ, 2024

অভিভাবক হিসাবে কিশোর-কিশোরী সন্তানদের লালনপালন করা সবসময় সহজ হয় না। এখনকার কিশোর-কিশোরীদের চিন্তাভাবনা প্রতিদিন পরিবর্তিত হচ্ছে, তারা স্বাধীনতা খুঁজছেন, যা কিছু তাদের করতে মানা সেই বাধা সরিয়ে দিতে চাইছেন, অনলাইনে অনেকটা সময় কাটাচ্ছেন আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মা-বাবাদের কথা অবিশ্বাস করছেন। (সত্যি কথা বলতে গেলে, কিশোর বয়সে আমরাও এমনটাই করতাম!) কিন্তু এখনকার দুনিয়া একেবারেই আলাদা, তাই না? আমাদের এখন এমন বিষয়ে আমাদের কিশোর-কিশোরী সন্তানদের সচেতন করতে হয় যা আমরা কখনও ভাবিনি - যেমন, অনলাইনে উদ্দেশ্যমূলক বিভ্রান্তিকর তথ্য চিহ্নিত করা বা ইতিবাচক ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট তৈরি করা বা আমাদের ব্যক্তিগত ডেটা কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে তা বোঝা। আমরা যখন নিজেরাই নিশ্চিত নই যে তারা আমাদের কথা শুনছেন কি না, সেই অবস্থায় আমরা কীভাবে তাদের এই জটিল সমস্যাগুলো বুঝতে সাহায্য করব?

সত্যি কথা বলতে গেলে, কিশোর-কিশোরীরা আমরা যা বলি তার চেয়ে আমরা যা করি, তা বেশি লক্ষ্য করেন। আপনি যদি আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তানকে শেখাতে চান যে কীভাবে সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা করতে হয়, দক্ষভাবে কিছু প্রকাশ করতে বা বোঝাতে হয় এবং প্রযুক্তি বা সোশ্যাল মিডিয়ার দায়িত্বশীল ইউজার হতে হয়, তাহলে আপনাকে তাকে তা করে দেখাতে হবে। আপনাকে রোল মডেল হিসাবে ইতিবাচক আচরণ বাস্তবে করে দেখাতে হবে, যাতে তিনি তা দেখতে পান। আপনি অনলাইনে যা করেন তা আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তানের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, অর্থাৎ আপনাকে দেখে তিনিও তা করতে পারেন - তাহলে তিনি কীভাবে দায়িত্বশীল ডিজিটাল নাগরিক হবেন, আপনার তা করে তাকে দেখানো উচিত নয় কি? ডিজিটাল বিশ্বের সাথে আপনি যেভাবে যোগাযোগ করেন, সেই মিডিয়া লিটারেট আচরণকে আদর্শ মনে করলে কেমন হয়?

মডেল বা আদর্শ মিডিয়া লিটারেট আচরণের 5টি পরামর্শ এখানে রয়েছে:

  1. কিশোর-কিশোরী সন্তানের কোনো মিডিয়া কনটেন্ট শেয়ার করার আগে তার অনুমতি নিন। আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তান যেন আপনাকে অবশ্যই বিশ্বাস করতে পারেন আর তা যেন বজায় থাকে। একইসাথে এটাও গুরুত্বপূর্ণ যে তিনি যেন জানতে পারেন, আপনি তাকে ও তার প্রাইভেসিকে সম্মান করেন। বিশ্বাস তৈরি করা ও তাকে সম্মান দেখানোর একটি সহজ উপায় হলো, তার অনুমতি না নিয়ে তার সম্পর্কে কখনই কোনো কিছু পোস্ট করবেন না। কখনই না। আপনার ঠিক মনে হলেও তার অনুমতি না নিয়ে তার বলা মজাদার কিছু বা আপনি তার ছবি তুললে, সেই ছবি এমনকি গর্বের কোনো ইতিবাচক মেসেজও শেয়ার করবেন না। এমনটা করলে তার মধ্যে অবিশ্বাস্য রকমের গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা বাড়বে, যাতে তিনি অন্যদের সম্পর্কে কিছু পোস্ট বা শেয়ার করার আগে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন যে তা করা সঠিক কি না।
  2. মিডিয়া কনটেন্ট শেয়ার করার আগে থামুন। আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তানকে দেখান যে তথ্য শেয়ার করার আগে আপনি সেটির বিশ্বাসযোগ্যতা ও নির্ভরযোগ্যতা পরীক্ষা করেন। যে কনটেন্টের কারণে আপনি আবেগ প্রকাশ করেন, বিশেষত রেগে যান, এমন কনটেন্ট শেয়ার করার আগে আপনি যে গভীর শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করেন, তাকে তাও দেখান। সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে আপনি যে সচেতন এবং কোনো কিছু পোস্ট করার আগে চিন্তাভাবনা করে তবেই যে তা করেন, তাকে তা দেখান।
  3. তাকে মিডিয়া কনটেন্ট সম্বন্ধিত প্রশ্ন করুন। মিডিয়া লিটারেট লোকেরা অর্থাৎ যারা সোশ্যাল মিডিয়ার কনটেন্ট সম্পর্কে জানেন, তারা নিজেদের ব্যবহার করা ও তৈরি করা মিডিয়া সম্পর্কে কৌতূহলী, জিজ্ঞাসু ও সন্দিহান হন। মিডিয়া কনটেন্টের বিষয়ে আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তানকে নিজেকেই প্রশ্ন করতে শেখান, এতে প্রশ্ন করার আদর্শ অভ্যাস তৈরি হবে। তা "সত্যি ঘটনার ভিত্তিতে" তৈরি কোনো সিনেমার ঘটনা যাচাই করা হতে পারে বা কোনো ব্রেকিং নিউজের গভীরে গিয়ে অনুসন্ধান করা বা কোনো সেলিব্রিটি দম্পতির বিচ্ছেদের কারণ জানা, যা কিছু হতে পারে। এক্ষেত্রে, সবসময় তথ্য, তথ্যের বিষয়বস্তু ও বিশ্বাসযোগ্যতার উৎস বোঝার জন্য তাকে মিডিয়ার কনটেন্ট সম্পর্কে প্রশ্ন করুন।
  4. আপনার প্রবণতা কী, তা বুঝুন। আমরা সবাই আমাদের নিজস্ব বিশ্বাস, অভিজ্ঞতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মিডিয়া কনটেন্ট দেখি। আপনি যে কনটেন্ট ব্যবহার করেন ও শেয়ার করেন সেই সম্পর্কিত অনুভূতিকে আপনার প্রবণতা ও সেটির প্রভাব কতটা প্রভাবিত করে, সেই সম্পর্কে সচেতন হোন।
  5. প্রযুক্তি বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে ভারসাম্য বজায় রাখুন। তাকে দেখান যে প্রযুক্তি বা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিরতি নেওয়া সম্ভব। সোফায় আরাম করে বসে বই পড়ুন। পাজল খেলুন। ফোন ছাড়াই হেঁটে ঘুরতে যান। পোষা কুকুরকে নিয়ে পার্কে ঘুরতে যান। আপনি যদি 100% প্রযুক্তি বা সোশ্যাল মিডিয়ার উপর নির্ভরশীল না হন, তাহলে আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তানকে নিজেকে আদর্শ করে দেখাতে পারবেন যে তারও সোশ্যাল মিডিয়ার উপর নির্ভরশীল হওয়ার প্রয়োজন নেই। এই ভারসাম্য খুঁজে পাওয়া কতটা কঠিন তা নিয়ে আলোচনা করতে ভয় পাবেন না বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে আরও বেশি ভারসাম্য বজায় রাখতে কী কী করছেন, সেই সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলুন।
আপনার লোকেশন হিসাবে নির্দিষ্ট কনটেন্ট দেখতে আপনি কি অন্য কোনো দেশ বা অঞ্চল বেছে নিতে চাইবেন?
পরিবর্তন করুন