মা-বাবাদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া সংক্রান্ত পরামর্শ

আজকের যুগের কিশোর-কিশোরীরা এমন এক বিশ্বে বড় হচ্ছেন, যেখানে তারা সবসময়েই হাতের কাছে ইন্টারনেট পাচ্ছেন। অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা তাদের নিজেদের পরিচয় ও আগ্রহ খুঁজতে, নিজেদের প্রকাশ করতে এবং সারা বিশ্বে কী ঘটছে, তা জানতে বিভিন্ন ধরনের দুর্দান্ত উপায় থাকা সত্ত্বেও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পারেন এবং হেনস্থা ও হয়রানির মতো খারাপ অভিজ্ঞতারও সম্মুখীন হতে পারেন।

এই কারণেই, আপনার কিশোর বয়সী সন্তানের সাথে খোলা মনে আলোচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সোশ্যাল মিডিয়া নতুন ব্যবহার করছেন বা আগে থেকেই করছেন যাই হোক না কেন, এই সমস্যাগুলো নিয়ে নিয়মিত তার সাথে আলোচনা করাও গুরুত্বপূর্ণ।

এই প্রসঙ্গে আপনি প্রথমবার কথা বলুন বা মূল প্রসঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা যাই করুন না কেন, সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা, সুস্থতা ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে আপনার কিশোর বয়্সী সন্তানের সাথে কথা বলতে সাহায্য করবে এমন কিছু পরামর্শ এখানে পাবেন:

পরামর্শ #1: আপনার কিশোর বয়সী সন্তান কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন, সেটা জানতে আগে সময় নিন

আপনি হয়ত অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নিজের কিশোর বয়সী সন্তানের প্রথম পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন অথবা হয়ত তিনি আগে থেকেই বেশ কিছু সময় ধরে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছেন এবং তার হয়ত বেশ কিছু ফেভারিট অ্যাপ, প্ল্যাটফর্ম ও অনলাইন অ্যাক্টিভিটি আছে। আপনার কিশোর বয়সী সন্তানের সাথে কথা বলুন এবং তিনি সোশ্যাল মিডিয়াতে কী দেখতে পছন্দ করেন এবং কোন কোন বিষয় তার মনে বিষণ্ণতা বা দুশ্চিন্তার মতো খারাপ অনুভূতি আনতে পারে, তা জানার চেষ্টা করুন। তিনি অনলাইন দুনিয়ায় প্রবেশ করার সময়, তাকে সঠিকভাবে পথ দেখাতে আপনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।

পরামর্শ #2: আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া সংক্রান্ত একটি উপযোগী পেরেন্টিং স্টাইল বেছে নিন

আপনার পরিবারের জন্য কোন জিনিসটি সবথেকে ভালো হবে, তা আপনার থেকে ভালো কেউ জানেন না। এর মানে হলো বিভিন্ন ডিভাইস ও অ্যাপের জন্য নিয়ম সেট করা, আপনার সন্তানের নতুন আগ্রহের বিষয় খুঁজে পেতে সাহায্য করা এবং অনলাইন ও অফলাইন অ্যাক্টিভিটির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য আপনার থেকে ভালো কেউ হতে পারেন না।

প্রতিটি পরিবারই অনন্য। আপনার পেরেন্টিং স্টাইলটি আপনার ও আপনার কিশোর বয়সী সন্তানের মধ্যে একটি মৌখিক চুক্তি হতে পারে, আপনাদের উভয়ের মধ্যে স্বাক্ষর করা লিখিত চুক্তি হতে পারে বা কোনো তত্ত্বাবধানের টুলও জড়িত থাকতে পারে। আপনার কিশোর বয়সী সন্তানের সাথে আলোচনা করুন এবং ইতিবাচক উপায়ে অনলাইন দুনিয়ার সাথে সংযুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য পাওয়ার সবথেকে ভালো উপায় খুঁজে বার করুন।

পরামর্শ #3: একসাথে প্রাইভেসি সেটিংস সম্পর্কে জানুন

বিভিন্ন ডিভাইস আর অ্যাপ নানা রকমের প্রাইভেসি টুল ও সেটিংস সরবরাহ করতে পারে। এই সেটিংগুলো সম্পর্কে আরও জানা এবং আপনার কিশোর বয়সী সন্তানের সাথে তা নিয়ে আলোচনা করার অভ্যাস চালু রাখা সবসময়ই ভালো। এই সেটিংগুলোর উপর আপনার ও তার যত বেশি নিয়ন্ত্রণ থাকবে, আপনাদের অভিজ্ঞতা সামগ্রিকভাবে তত ভালো হবে।

আপনার কিশোর বয়সী সন্তানকে একটি শক্তিশালী ও অনন্য পাসওয়ার্ড বেছে নিতে সাহায্য করুন। পাবলিক ও প্রাইভেট প্রোফাইলের সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে তার সাথে আলোচনা করুন। সময়সীমা সেট করা এবং তার সুবিধা মতো সময়ের মধ্যে সামগ্রিক ভারসাম্য খুঁজে পাওয়া সম্পর্কে জানুন।

পরামর্শ #4: কোনো কনটেন্ট সম্পর্কে কখন অভিযোগ করতে হবে এবং কখন ইউজারদের আনফলো বা ব্লক করতে হবে, তা আলোচনা করুন

আপনার কিশোর বয়সী সন্তান অনলাইনে অনুপযুক্ত কোনো কনটেন্ট বা আচরণের সম্মুখীন হলে, নিষ্পত্তির টুলগুলো কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তিনি যে তা জানেন সেই বিষয়ে নিশ্চিত হন, এমনটা করলে নিরাপদ আর ইতিবাচক অনলাইন অভিজ্ঞতা লাভে তিনি সাহায্য পেতে পারেন।

Instagram-এ কিশোর-কিশোরীরা অ্যাকাউন্ট ব্লক করে বা আনফলো করে তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এছাড়াও, Instagram-এ অভিযোগ জানানোর এমন কিছু ফিচার আছে যা গ্লোবাল টিমের কাছে অভিযোগ রিভিউ করার জন্য পাঠায় এবং এর ফলে অ্যাপের কমিউনিটি নির্দেশিকা ও পরিষেবার শর্তাবলী লঙ্ঘনকারী কনটেন্ট যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরিয়ে দেওয়া যায়।

কিশোর-কিশোরীরা Instagram-এর 'সীমাবদ্ধ করুন' ফিচারটিও ব্যবহার করতে পারেন, এই ফিচারটিকে কোনো হেনস্থা্র উপর নজর রাখার পাশাপাশি চুপিচুপি তাদের অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখার জন্যও তৈরি করা হয়েছে। 'সীমাবদ্ধ করুন' ফিচারটি চালু করার পর, যে ব্যক্তির ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে তিনি কিশোর বা কিশোরী ইউজারের পোস্টে কমেন্ট করলে, তা শুধু সেই ব্যক্তিই দেখতে পাবেন। আর বিধি-নিষেধ আরোপ করা কোনো ব্যক্তি কোনো কমেন্ট করলে, সেটি সম্পর্কে আপনার কিশোর বয়সী সন্তান কোনো নোটিফিকেশন পাবেন না।

Instagram-এ কীভাবে কোনো কনটেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাবেন, সেই বিষয়ে এখান থেকে আরও জানুন.

পরামর্শ #5: Instagram-এ 'তত্ত্বাবধান' সেট আপ করুন

আপনার কিশোর বয়সী সন্তানের অনলাইন অভ্যাস নিয়ে আলোচনা করার পর, Instagram ব্যবহার করার জন্য তার সাথে মিলে একটি প্ল্যান তৈরি করুন।

আপনারা উভয়ই সম্মত হয়েছেন, এমন প্ল্যান অনুযায়ী, Instagram-এ পেরেন্টাল (অভিভাবকীয়) তত্ত্বাবধানের টুল সেট আপ করার জন্য তার সাথে মিলে কাজ করুন। এই টুলগুলো আপনাকে নিজের কিশোর বয়সী সন্তানের ফলোয়ার ও ফলোয়িং লিস্ট দেখতে, দৈনিক সময়সীমা সেট করতে এবং তিনি অ্যাপে কতক্ষণ সময় কাটাচ্ছেন, তা দেখতে দেবে। এছাড়া, Instagram-এ কোনো পোস্ট বা অন্য কোনো অ্যাকাউন্টের মতো কনটেন্ট সম্পর্কে আপনার কিশোর বয়সী সন্তান অভিযোগ জানালে, আপনি তাও দেখতে পাবেন।

পরামর্শ #6: আপনার Facebook অ্যাকাউন্টের জন্য প্রাইভেসি চেকআপ

আপনার Facebook অ্যাকাউন্টের জন্য হলো Facebook-এ আপনার ও আপনার পরিবারের প্রাইভেসি পছন্দগুলো রিভিউ করার জন্য Meta-র হাব। আপনার নির্দিষ্ট চাহিদা পূরণ করতে এবং কারা আপনার পোস্ট দেখতে পাবেন, কোন কোন অ্যাপ আপনার তথ্য অ্যাক্সেস করতে পারবে, কারা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতে পারবেন ও আরও অনেক কিছু করতে পারবেন, তা সীমিত করতে আপনি এই টুলটি অ্যাডজাস্ট করতে পারবেন। প্রাইভেসি সেটিংসের ওপর নজর রাখা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনই গুরুত্বপূর্ণ হল শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ও দুই-ধাপ বিশিষ্ট যাচাইকরণ ব্যবহার করা।

Facebook-এর নিরাপত্তা পরীক্ষার মতো টুল ব্যবহার করে, আপনার কিশোর বয়সী সন্তানের সোশ্যাল অ্যাকাউন্টের সুরক্ষা নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ. একই পাসওয়ার্ড বারবার ব্যবহার না করা এবং দুই-ধাপ বিশিষ্ট যাচাইকরণ ব্যবহার করার মতো নিরাপত্তার ভালো অভ্যাস বজায় রাখার পাশাপাশি এটিও করতে হবে।

পরামর্শ #7: ডিভাইস ও অ্যাপে পেরেন্টাল কন্ট্রোল চালু করুন

আপনার কিশোর বয়সী সন্তানের ডিভাইস পরিচালনা করতে আরও সাহায্যের প্রয়োজন হলে, Android ও iOS উভয় ডিভাইসে উপলভ্য পেরেন্টাল কন্ট্রোল দেখুন। আপনি অ্যাপ ডাউনলোড ব্লক করা, কনটেন্ট সীমিত করা বা ডিভাইসের সময়সীমা সেট করার মতো বিকল্প খুঁজে পেতে পারেন। আপনার কিশোর বয়সী সন্তানের ডিভাইস সেটিংস দেখুন এবং সেগুলোকে এমনভাবে সেট করুন, যাতে তা আপনার ও আপনার সন্তানের জন্য উপযোগী হয়।

আপনার পেরেন্টাল কন্ট্রোলের বিকল্পগুলো আরও ভালো ভাবে বুঝতে, আপনি নিজের কিশোর বয়সী সন্তানের অ্যাপ সেটিংসও দেখতে পারেন। যেমন, Instagram-এ এমন কিছু তত্ত্বাবধান টুল আছে, যার সাহায্যে মা-বাবারা নিজের কিশোর বয়সী সন্তানের ফলোয়ার ও তিনি যাদের ফলো করেন তাদের লিস্ট দেখার পাশাপাশি সময়সীমাও সেট করতে পারেন।

Instagram-এর তত্ত্বাবধান টুল সম্পর্কে এখান থেকে আরও জানুন.

পরামর্শ #8: নিঃসঙ্কোচ ভরসার সম্পর্ক তৈরি করুন

আপনার কিশোর বয়সী সন্তানের অনলাইন অ্যাক্টিভিটি নজরে রাখার সবথেকে ভালো উপায় হলো পারস্পরিক সম্মান ও স্বচ্ছতা বজায় রাখা। কোনো অল্পবয়সী ছেলেমেয়ে অন্যদের তুলনায় খুব সহজেই আক্রান্ত হতে পারেন এবং তাদের ওপর মা-বাবাদের আরও বেশি নজর রাখা প্রয়োজন।

আপনি নিজের কিশোর বয়সী সন্তানের ওপর নজর রাখলে, সেটি তাকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া ভালো। এর ফলে, আপনারা উভয়েই নিজেদের কাছে স্বচ্ছ থাকবেন এবং কারোরই মনে হবে না যে তার বিশ্বাস লঙ্ঘন করা হয়েছে।


পরামর্শ #9: সীমানা (যেমন, সময়সীমা) সেট করে তা প্রয়োগ করুন

আপনি যদি নিজের কিশোর বয়সী সন্তানের স্ক্রীন টাইম ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের সীমানা (যেমন, সময়সীমা) সেট করেন তাহলে, তার সাথে মিলে সেই বিষয়ে নজর রাখতে ও তা প্রয়োগ করতে ভুলবেন না। সীমানা (যেমন, সময়সীমা) সেট করা হলে, তা কিশোর-কিশোরীদের কী করা উচিৎ ও কী করা উচিৎ নয়, সেই বিষয়ে ভাবতে সাহায্য করে।

অনলাইনে ফ্রেন্ড ও মা-বাবা বা অভিভাবকের সাথে তার সম্পর্ক কীভাবে সবথেকে ভালো ভাবে পরিচালনা করা যায়, তা নিয়ে ভাবার জন্য এটি একটি ভালো অভ্যাস।

পরামর্শ #10: ভালো একটি উদাহরণ সেট করুন

কিশোর-কিশোরীরা জীবনের সব ক্ষেত্রে ও সব সম্পর্কের ক্ষেত্রে, মা-বাবাকেই আদর্শ হিসাবে মনে করেন। প্রযুক্তি ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য।

ডিভাইস ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার পাশাপাশি আপনি তার জন্য যে নির্দেশিকা স্থির করেছেন, সেটি মেনে চলার ক্ষেত্রেও একটি ভালো উদাহরণ তৈরি করতে তিনি আপনাকেই অনুসরণ করবেন। আপনার কিশোর বয়সী সন্তান কখন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে বা অনলাইনে আসতে পারবেন, সেই বিষয়ে সময়সীমা সেট করলে, আপনি নিজেও সেই একই নিয়ম মেনে চলুন। তিনি যদি রাত 10টার পর আর মেসেজ করতে না পারেন তাহলে, নিজেও একই নিয়ম মেনে চলুন।

সম্পর্কিত বিষয়

আপনার লোকেশন হিসাবে নির্দিষ্ট কনটেন্ট দেখতে আপনি কি অন্য কোনো দেশ বা অঞ্চল বেছে নিতে চাইবেন?
পরিবর্তন করুন