অনলাইনে বয়স উপযোগী কনটেন্ট: মা-বাবাদের কাছে এর তাৎপর্য কী

আগামী কিছু সপ্তাহে Facebook ও Instagram, কিশোর-কিশোরীরা দেখতে পান এমন আরও বেশি ধরনের কনটেন্ট সীমিত করার জন্য কাজ করবে। এই পরিবর্তন এমন নানা ধরনের কনটেন্টের উপর প্রয়োগ করা হবে, যেগুলো নিয়ে মা-বাবারা সবচেয়ে বেশি চিন্তিত। এর মধ্যে রয়েছে ইটিং ডিজঅর্ডার, আত্মহত্যা ও নিজেকে আঘাত করা, হিংস্রতার দৃশ্য এবং আরও নানা বিভাগ।

অর্থাৎ, সহজ ভাষায় বললে, কিশোর-কিশোরীরা বিশেষ কিছু ধরনের কনটেন্ট এখন আর তাদের ফ্রেন্ড বা ফলো করা লোকেরা শেয়ার করলেও দেখতে বা খুঁজে পাবেন না। কিশোর-কিশোরীরা হয়ত জানতেও পারবেন না যে তারা এই কনটেন্ট দেখতে পাচ্ছেন না, যেমন, তাদের বন্ধু বা সহকর্মীদের তৈরি করা কনটেন্ট যদি এরকম কোনো বিভাগের মধ্যে পড়ে তাহলে তারা আর তা দেখতে পাবেন না।

এই নতুন নীতিগুলো তিনটি প্রধান নির্দেশক নীতির ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।

1. বয়ঃসন্ধির সময় বিকাশের বিভিন্ন ধাপের কথা মাথায় রাখা এবং কিশোর-কিশোরীদের বয়স উপযোগী অভিজ্ঞতা প্রদান করার লক্ষ্য।
   
2. যেসব কনটেন্ট বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের পক্ষে সংবেদনশীল হতে পারে সেগুলোর প্রতি আরও সাবধানী পদক্ষেপ গ্রহণের অঙ্গীকার।
   
3. কিশোর-কিশোরীদের সংবেদনশীল প্রসঙ্গের ব্যাপারে সঠিক জায়গায় তথ্য খুঁজতে বা তাদের মা-বাবার সাথে কথা বলতে উৎসাহিত করার মূল্য।

বয়ঃসন্ধি হলো পরিবর্তনের সময়, যখন মানুষের সামাজিক, মানসিক ও চেতনার স্তরে এবং এর পাশাপাশি শারীরিক স্তরেও ক্রমবিকাশ হতে থাকে। বয়ঃসন্ধির সময় জুড়ে, কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে কনটেন্টকে সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ করার এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটরের উদ্দেশ্যকে বোঝার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এছাড়া, বয়ঃসন্ধির মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, তাদের মধ্যে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার এবং সম্পর্কের বিভিন্ন জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করার দক্ষতা তৈরি হয়। মনোবিকাশের এই ধারাগুলোর অগ্রগতি বয়ঃসন্ধির পুরো সময় জুড়েই অব্যাহত থাকে, অর্থাৎ, কম বয়সী ও বেশি বয়সী কিশোর-কিশোরীদের পছন্দ, দক্ষতা ও আগ্রহে পার্থক্য থাকতে পারে।

কিশোর-কিশোরীদের জন্য সংবেদনশীল কনটেন্ট কমিয়ে আনা আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। কিছু কনটেন্টে এমন থিম থাকে যা কমবয়সী লোকেদের ক্ষেত্রে তাদের বয়সের জন্য অনুপযুক্ত হতে পারে। এছাড়া, আমরা ইমেজকে কিছুটা আপনা-আপনি ও কিছুটা আবেগ দিয়ে প্রক্রিয়াকরণ করে থাকি, আর কিশোর-কিশোরীদের মনে এর প্রভাব টেক্সটের থেকেও বেশি হতে পারে। আর এই কারণেই, বিশেষ কিছু প্রসঙ্গ মা-বাবা বা অভিভাবকের মতো কোনো বিশ্বস্ত ব্যক্তির মাধ্যমে অ্যাক্সেস করা কিশোর-কিশোরীদের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

কোনো কনটেন্ট কেন সংবেদনশীল হতে পারে সেই ব্যাপারে তার সাথে কথা বলুন:

কিশোর-কিশোরীদের বোঝা জরুরি যে কেন তারা কনটেন্ট দেখতে পারছেন না। যেমন, তাদের বুঝিয়ে বলুন যে, বিশেষ কিছু ছবি দেখলে তাদের খুব খারাপ লাগতে পারে। যদিও কিছু কিছু প্রসঙ্গের ব্যাপারে তারা যদি সাধারণভাবে জেনে রাখেন তাহলে হয়ত অসুবিধা নেই, তবে তা এমন রিসোর্স থেকে জানা উচিত যেগুলো নির্ভরযোগ্য এবং/অথবা কোনো বিশ্বস্ত মা-বাবা বা অভিভাবকের মাধ্যমে এই কাজে অগ্রসর হওয়া উচিত যারা তাকে সাহায্য করতে পারেন।

যদি তার নিজের বা সমকক্ষ কারও কনটেন্ট সীমিত করা হয় তাহলে কী করণীয়?

এই নীতি প্রয়োগের ফলে, কিশোর-কিশোরীরা ফ্রেন্ডদের প্রোফাইলে আগে যে কনটেন্ট দেখতে পেতেন অথবা কোনো ফ্রেন্ড যে কনটেন্ট পোস্ট করেছে বলছে, সেইসব ধরনের কনটেন্ট এখন হয়ত আর দেখতে পাবে না – আর সেই মুহূর্তেই কিশোর-কিশোরী সন্তানদের সাথে মা-বাবারা এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলতে পারেন। যেমন, যদি কোনো ফ্রেন্ডের ডায়েটিং সংক্রান্ত কনটেন্ট দেখানো না হয়, তাহলে সেটি এমন খাদ্যাভ্যাস নিয়ে আলোচনা করার আদর্শ সময় হতে পারে যা পরে সমস্যাজনক হয়ে উঠতে পারে। কিশোর-কিশোরী সন্তান খাদ্যাভ্যাস বা শারীরিক ইমেজ সংক্রান্ত সমস্যার সম্মুখীন হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মা-বাবাদেরই সবার প্রথমে তা চোখে পড়ার কথা।

তার জন্য যে কনটেন্ট উপলভ্য রয়েছে সেগুলো নিয়েই চর্চা করতে উৎসাহিত করুন:

Meta-র নীতির লক্ষ্য হলো কিশোর-কিশোরীদের এমন কনটেন্ট দেখা থেকে সীমিত করা যা তাদের জন্য সংবেদনশীল হতে পারে। তবে, এরপরেও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার সময় কিশোর-কিশোরীদের ডিজিটাল সাক্ষরতা সংক্রান্ত দক্ষতা প্রয়োগ করা উচিত। যেমন, তারা এখনও ইটিং ডিজঅর্ডার থেকে সেরে ওঠা কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে তৈরি করা কনটেন্ট দেখতে পেতে পারেন, যে বিষয়ে হয়ত আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তানের মনে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। আপনার সন্তানের সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করে তাকে সঠিক পথে চলতে সাহায্য করুন।

• আপনার সন্তানকে জিজ্ঞাসা করুন যে তার ফ্রেন্ডের সেরে ওঠার ব্যাপারে তার কী মনে হয়?
• তার চেহারা কি তার ব্যক্তিত্বের উপর কোনো উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে?

Meta এমন কনটেন্ট বিষয়ক নীতি পরিবর্তন করছে যেসব কনটেন্ট কিশোর-কিশোরীদের জন্য অত্যাধিক সংবেদনশীল হতে পারে। এটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মকে কিশোর-কিশোরীদের বয়স উপযোগী পদ্ধতিতে সংযুক্ত হওয়ার এবং সৃজনশীল হয়ে ওঠার সেরা জায়গা হিসাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এই পরিবর্তনগুলো যত বেশি করে সামনে আসতে থাকবে, আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তান কঠিন প্রসঙ্গগুলো কীভাবে মোকাবিলা করছেন, তা আপনি ভালোভাবে নজর রাখতে পারবেন এবং তা নিয়ে তার সাথে আলোচনা করার সুযোগ পাবেন।