LGBTQ+ কিশোর-কিশোরীর সাথে দায়িত্ব সহকারে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের বিষয়ে কথা বলা | LGBT ও প্রযুক্তি

LGBT ও প্রযুক্তি

কিশোর-কিশোরীদের সাথে টেক্সট, সোশ্যাল মিডিয়া ও মোবাইল ফোন ব্যবহারের বিষয়ে আলোচনা করার বিষয়টি বেশিরভাগ দায়িত্বশীল প্রাপ্তবয়স্কদের কাছেই চ্যালেঞ্জ হতে পারে। অধিকাংশ সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ ব্যবহার করতে হলে ব্যবহারকারীদের বয়স অন্তত ১৩ বছর হতে হবে, এর চেয়ে কম বয়সীরা অ্যাকাউন্টে সাইন আপ করার জন্য নিজেদের বয়সের ব্যাপারে ভুল তথ্য দিয়ে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে কারও 10 বছর বয়স হয়ে গেলেই তারা মোবাইল হাতে পায় এবং কিশোর-কিশোরীদের 95% স্মার্টফোন অ্যাক্সেস করতে পারে বলে রিপোর্টে জানা গেছে। আর তাই কিশোর-কিশোরীরা ভরসা করতে পারে এমন কোনো প্রাপ্তবয়স্কের উচিত তাদের সাথে খোলামেলাভাবে স্মার্টফোন ও সোশ্যাল মিডিয়ার যথাযথ ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করা।

বাড়ির কিশোর-কিশোরীর সাথে আপনার সম্পর্ক যাই হোক না কেন, আপনি জানেন যে তারা নিজেদের জীবনে আরও বেশি স্বাধীনতা, দায়িত্বশীলতা ও গোপনীয়তা চাইছে এবং ফোন ও সোশ্যাল মিডিয়া এক্ষেত্রে খুব বড় ভূমিকা নিতে চলেছে। LGBTQ+ কমিউনিটির অংশ হলে, মোবাইল ফোন অনেক পরিস্থিতিতেই তাদের লাইফলাইন হতে পারে কারণ তারা নিজের যৌনতা-কেন্দ্রিক পরিচয়, কমিউনিটি তৈরি, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিষয়ক সাধারণ তথ্য এর মাধ্যমে খুঁজে নিতে পারে। যাইহোক, তথ্য খোঁজার এই প্রক্রিয়ার মধ্যে অনলাইনে তাদের সুরক্ষিত রাখার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। নিচে দেওয়া পরামর্শগুলো সমস্ত কিশোর-কিশোরীর ক্ষেত্রেই দরকারি, তবে কেউ LGBTQ+ কমিউনিটির সদস্য হলে এবং নিরাপত্তা ও সুরক্ষার দিক থেকে কোনোরকমের ঝুঁকি থাকলে এই আলোচনা করা খুবই জরুরি। পাশাপাশি এই কঠিন আলোচনা কীভাবে চালিয়ে যাবেন সেই বিষয়ে পরামর্শও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

পরামর্শ #1 – কট্টর ও অনমনীয় হয়ে আলোচনা করলে তা ফলপ্রসূ হওয়ার সম্ভবনা কম।

আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তানকে ডিজিটাল বা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট রাখার মতো যথেষ্ট পরিণত মানসিকতার বা দায়িত্বশীল নয় বলা অথবা অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে বলার পরিবর্তে Netsmartz.org সাইটে দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী আলোচনা শুরু করতে পারেন। এখানে কয়েকটি দেওয়া হল:

  • তোমার প্রিয় ওয়েবসাইট বা অ্যাপ কোনটি?
  • এতে তুমি কী কী করতে পছন্দ করো?
  • কখনো অনলাইনে এমন কিছু চোখে পড়েছে কি যা তুমি দেখতে চাও না?

এছাড়াও আপনি LGBTQ+কিশোর কিশোরীকে নিরাপদ রিসোর্সের সন্ধান দিতে পারেন যার মাধ্যমে তারা অন্যান্য কিশোর-কিশোরী এবং পেশাদার ব্যক্তির সাথে সহায়তার জন্য যোগাযোগ করতে পারে।

বিষমকামী বন্ধুদের তুলনায় LGBTQ+ কমিউনিটির কিশোর-কিশোরীরা প্রতিদিন গড়ে 45 মিনিট বেশি সময় অনলাইনে কাটায় এবং এই তথ্য জানার পরে এটা বোঝা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় যে তারা কাদের সাথে কথা বলে, তারা কোনো অনুপযুক্ত টেক্সট, ফটো বা তথ্য কারও সাথে শেয়ার করে ফেলছে কি না বা অন্য কেউ তাদের এই ধরনের জিনিস পাঠাচ্ছে কি না। আপনার বাড়ির কিশোর-কিশোরীর সাথে আলোচনা করে তাকে বোঝান যে অনলাইনে সঠিক ও বেঠিক আচরণের বিষয়ে সম্যক জ্ঞান থাকাটা তার নিজের গোপনীয়তা ও দায়িত্ববোধের অংশ।

পিতামাতা এবং অভিভাবকরা শুধুমাত্র কিশোর-কিশোরীদের ফোন/ইন্টারনেটে নজর রেখে বা তাদের কাছে থেকে এই সুবিধাগুলো কেড়ে নিয়ে অনলাইন নিরাপত্তার বিষয়টি পরিচালনা করার সহজ পথের দ্বারা প্রলুব্ধ হতে পারেন। স্বাভাবিকভাবেই এক্ষেত্রে কিশোর-কিশোরীদের কাছ থেকে বাধা আসার যথেষ্ট সম্ভবনা রয়েছে। যদিও এইসব বিধিনিষেধ কখনও কখনও কার্যকর হতে পারে, তবে সেক্ষেত্রে অনলাইন সুরক্ষার ব্যাপারে খোলামেলা আলোচনা ও কথাবার্তার ভিত্তিতেই এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, অন্যথায় হিতে বিপরীত হতে পারে। কিশোর-কিশোরীরা দেখেছে যে অভিভাবকরা সহজ সমাধান হিসাবে অভিভাবকীয় নিয়ন্ত্রণ বা অভিভাবকীয় সীমাবদ্ধতার প্রয়োগ করে কম ঝঞ্ঝাটে “বার্নার” বা “ফোন ট্র্যাপ” কৌশল ব্যবহার করে থাকেন। প্রযুক্তি বা ডিজিটাল অভিজ্ঞতা থেকে দূরে সরিয়ে রাখলে তা বিশেষ কার্যকর হবে না; বরং মা-বাবা এর পরিবর্তে সন্তানকে শেখাতে পারেন যে কীভাবে তারা অনলাইনে নিজেদের সুরক্ষিত রাখবে।

পরামর্শ #2 – নিজের ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট সুরক্ষিত রাখতে কিশোর-কিশোরীদের সাহায্য করুন।

অনলাইনে কী শেয়ার করা উচিত ও অনুচিত সেই বিষয়ে কিশোর-কিশোরীদের সাথে কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি যৌনতা সম্বলিত টেক্সটের সাথে সম্পর্কিত। কিশোর-কিশোরীরা অন্যান্য কিশোর-কিশোরীদের সাথে অনুপযুক্ত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে পারে ও তাদের ব্যক্তিগত ছবি বা তথ্য খোঁজ করছে এমন কারও ফাঁদে পা দিয়ে ফেলতে পারে। এই ধরনের ঘটনার শিকার হওয়া কিশোর-কিশোরীদের জীবনে কোনো যত্নশীল প্রাপ্তবয়স্কের সাহায্য এবং সম্ভবত মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক পেশাদারদের সহায়তার প্রয়োজন পড়বে। “Talking to Teens about Sexting” নিবন্ধে বলা রয়েছে কীভাবে কিশোর-কিশোরীদের সাথে এই আলোচনা করা যায় এবং Netsmartz সাইটে পরিবারের জন্য রিসোর্স রয়েছে যা সহায়ক হতে পারে।

পরামর্শ #3 – কিশোর-কিশোরীরা অনলাইনে যে সব শনাক্তকরণযোগ্য তথ্য, লোকেশন এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করে থাকে সেই বিষয়ে তাদের সাথে কথা বলুন।

কিশোর-কিশোরীরা গোপনীয়তা সেটিংস এবং গেমিং অ্যাক্টিভিটির সময় অনলাইন টিমমেট বা প্রতিপক্ষের সাথে কোন তথ্য শেয়ার করে সে সম্পর্কে তাদের সচেতন থাকা উচিত। অতিমারীর সময়ে অনলাইন প্রলোভনের ক্ষেত্রে প্রায় 100% বৃদ্ধি দেখা গেছে। গেমিং, সোশ্যাল মিডিয়া এবং মেসেজিং অ্যাপের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের সাথে যোগাযোগ করা হয়। অন্য কিশোর-কিশোরীদের অভিনয় করা, কথোপকথন চালিয়ে যাওয়া বা সম্পর্ক গড়ে তোলার “ট্রেনিং” দেওয়া হয় অথবা আপত্তিকর ফটো/ছবি পাঠাতে বলা হয় যা পরে ব্ল্যাকমেল বা বিক্রি/ব্যবসার জন্য ব্যবহার করা হতে পারে। LGBTQ+ কমিউনিটির কিশোর-কিশোরীরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে কারণ তারা প্রায়ই নিজেদের চেনাজানা লোকেদের সাথে যৌন পরিচয় নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত থাকে না এবং অন্যান্য নানা রিসোর্স থেকে তথ্য ও সহায়তা খোঁজে। HRC.org সাইটে Being an LGBTQ+ Ally লেখাটি এই অবস্থায় থাকা LGBTQ+কিশোর-কিশোরীদের সাহায্য করতে চাওয়া লোকেদের কাছে গুরুত্বপূূর্ণ রিসোর্স হতে পারে।

পরামর্শ #4 – কিশোর-কিশোরীদের জানান যে অনলাইনে কাউকে "উত্যক্ত করা" শুধুমাত্র একটি ক্লিকেই সাইবার হেনস্থায় বদলে যেতে পারে।

আপনার সন্তানকে উত্যক্ত করা হলে বা সে অন্য কাউকে উত্যক্ত করলে বাস্তবে তা চিরকাল অনলাইনে থেকে যায়। LGBTQ কমিউনিটির ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে 48.7% এক বছরে সাইবার হেনস্থার শিকার হয়েছে। এমনকি কাউকে হেনস্থা করার উদ্দেশ্যে করা কোনো পোস্ট শেয়ার বা "লাইক" করাও হেনস্থা করার আওতায় পড়ে। Stopbullying.gov সাইটে সাইবার হেনস্থার সংজ্ঞা দেওয়া রয়েছে ও এই বিষয়ে অভিযোগ জানানোর পদ্ধতি দেওয়া রয়েছে। এই সাইটে আপনার সন্তানের পাশে দাঁড়ানোর উপায় খুঁজে পেতে পারেন।

পরামর্শ #5 – আপনার সন্তানের ফ্রেন্ডদের সে ভালোভাবে জানে কি না নিশ্চিত হোন।

কিশোর-কিশোরীদের কাছে সোশ্যাল মিডিয়াতে নতুন ফ্রেন্ডদের কনফার্ম করা ও ফলোয়ার বাড়ানো একটি দারুণ আকর্ষণীয় ব্যাপার। কোনো ফ্রেন্ড যদি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায় তাহলে তা গ্রহণ করা হয়তো ক্ষতিকারক নয় এবং তা থেকে নতুন ও ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে, তবে এক্ষেত্রে কিশোর-কিশোরীদের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। অনলাইন ভিডিও গেম অনলাইনে একে অন্যের সাথে যোগাযোগের আরেকটি সোর্স যা প্রাপ্তবয়স্করা প্রায়শই নজর রাখার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন না, তবে এটিও বিবেচনার আওতায় রাখা উচিত। অনেক কিশোর-কিশোরীর কাছে ভিডিও গেম একটি জনপ্রিয় সোশ্যাল আউটলেট (যখন তারা ফোন ব্যবহার করে না) এবং অর্ধেকেরও বেশি কিশোর-কিশোরী জানিয়েছে যে তারা অনলাইনে গেম খেলার সময় নতুন ফ্রেন্ড তৈরি করেছে। LGBTQ+কমিউনিটির কিশোর-কিশোরীদের কাছে কমিউনিটি তৈরি, নতুন ফ্রেন্ড খুঁজে পাওয়া ও নিজেদের তুলে ধরার ক্ষেত্রে অনলাইন গেমিং সহায়ক হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে, তবে গেম খেলার সময়ে সুরক্ষিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার সন্তানকে অবশ্যই মনে করাবেন, তারা যেন নতুন ফ্রেন্ড বা ফলোয়ারের পোস্টে নজর রাখে। তাদের অ্যাকাউন্ট কেউ হ্যাক করতে পারে এবং যেসব কিশোর-কিশোরী নিজের অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখার প্রতি সতর্ক থাকে তারা কেবল নিজেদেরই নয় বরং তাদের প্রকৃত ফ্রেন্ড এবং ফলোয়ারদের সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করে। আপনার সন্তানকে উৎসাহিত করুন যাতে সে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের নীতি এবং নিয়ম লঙ্ঘনকারী ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট – শুধুমাত্র উপেক্ষা না করে – বরং সে যেন সেগুলো ব্লক এবং রিপোর্টও করে।

পরামর্শ #6 – প্রতিক্রিয়া জানানোর বদলে প্রতিরোধের পদ্ধতি শেখালে আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তানের সাথে অন্য কারও রুচিবিরুদ্ধ বা অস্বস্তিকর কথোপকথনের সম্ভবনা কমে যায়।

অনলাইনে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে কীভাবে নিজেদের সুরক্ষিত করতে হয় সে বিষয়ে না জানলে বিশেষত LGBTQ+কমিউনিটির কিশোর-কিশোরীদের বিপদে পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। একজন LGBTQ+ কিশোর-কিশোরীর জীবনে ভরসাযোগ্য ব্যক্তি হিসাবে ডিজিটাল মাধ্যমগুলোর ব্যবহার বোঝা এবং এই বিষয়ে সক্রিয় থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনলাইন নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তার বিষয়ে LGBTQ+ কমিউনিটির সমস্যা নিয়ে আলোচনার সময়ে অস্বস্তির কারণে এই কথোপকথন এড়িয়ে যাবেন না; পরিবর্তে, এই দায়িত্ব কীভাবে পরিচালনা করা যায় সেই সম্পর্কে কিশোর-কিশোরীদের শিক্ষা দিয়ে সহায়তা করুন, কারণ আপনি কট্টর হলে তার পরিণাম উল্টো হতে পারে। আপনি কম জানেন এমন বিষয়গুলোর জন্য নিচে দেওয়া রিসোর্সের সহায়তা নিন ও সর্বোপরি আপনার বাড়ির কিশোর-কিশোরীর যেন এই উপলব্ধি হয় যে আপনি তার ও তার ডিজিটাল সুঅভ্যাসের প্রতি যত্নশীল।

রিসোর্স

আপনার লোকেশন হিসাবে নির্দিষ্ট কনটেন্ট দেখতে আপনি কি অন্য কোনো দেশ বা অঞ্চল বেছে নিতে চাইবেন?
পরিবর্তন করুন