মা-বাবারা, কিশোর বয়সের সন্তানদের সাথে অন্তরঙ্গ/ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবির বিষয়ে আলোচনা করলে, তারা সাধারণত দুটি বিষয়ে জোর দেন: তাকে সেগুলো পাঠাতে বারণ করা এবং এমনটা করলে সবচেয়ে খারাপ পরিণতি কী হতে পারে তা দেখানো। এটা সত্যি যে, কয়েকটি দেশে, ঘনিষ্ঠ বা অন্তরঙ্গ ছবি পাঠানো অবৈধ। কিন্তু এই পদক্ষেপ নিয়ে এই ধরনের ছবি পাঠানোর সবচেয়ে বড় উদ্বেগের সমাধান হয় না - এমনকি এতে হিতে বিপরীতও হতে পারে। আমরা যদি নিছক অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি পাঠানোর বিপদের বিষয়ে আলোচনা করি, তাহলে যে কিশোর-কিশোরীরা প্রেরকের সম্মতি ছাড়া এগুলো শেয়ার করছেন, তাদের কাছে এই খরব যায় যে তারা কোনো ভুল কাজ করছেন না। অন্য কিশোর-কিশোরীরাও এমন কোনো ঘটনার কথা শুনলে, তারাও হয়ত যে শেয়ার করেছে, তার পরিবর্তে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকেই দোষারোপ করবেন।
তবে ভালো খবর হলো,গবেষণা থেকে দেখা গেছে, যে আপনি যা কল্পনা করেন তার চেয়েও অনেক কম সংখ্যক কিশোর কিশোরীই অন্তরঙ্গ ছবি পাঠায়, – যেমন দশ জনের মধ্যে একজন।
পরামর্শ: কিশোর-কিশোরীরা এগুলোকে "অন্তরঙ্গ ছবি" বলে উল্লেখ করেন না। এগুলো “নিউডস” হিসাবে সবচেয়ে বেশি পরিচিত বা শুধু “পিকস,” বলা হয়, এছাড়াও এর জন্য অন্যান্য শব্দও রয়েছে।
কানাডার গবেষকরা গবেষণায় এও দেখেছেন যে, কিশোর-কিশোরীরা অন্তরঙ্গ ছবি পাঠানোর থেকে বেশি অন্তরঙ্গ ছবি পেয়েছে, তাই এটি আসলে যা তার চেয়ে বেশি সাধারণ মনে হতে পারে। নিজেদের বন্ধুবান্ধব ও সহপাঠীরা কী করছে, সেই বিষয়ে কিশোর-কিশোরীদের ভাবনাচিন্তা বেশ সংবেদনশীল: যদি তাদের কোনো জিনিস বেশ প্রচলিত বা সাধারণ বলে মনে হয়, তাহলে নিজেরা সেগুলো করলে তা ঠিক বলে মনে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমাদের কিশোর-কিশোরীদের এটি জানানো যে, "সকলেই এটি করে"—এটি সত্যি নয়। আপনার তাদের এটাও বলা উচিত যে, অন্তরঙ্গ ছবি পাঠানোর বিষয়ে তাদের ওপর যেন কেউ চাপ সৃষ্টি না করে।
এরপরে আপনার কিশোর বয়সের সন্তানদের সাথে আলোচনা করুন, কেউ তাদেরকে অন্তরঙ্গ ছবি পাঠালে, তখন কী করা উচিত। এটিকে সম্মান এবং সম্মতির প্রশ্ন হিসাবে সাজান: কেউ তোমাকে অন্তরঙ্গ ছবি পাঠালে এর অর্থ দাঁড়ায়, ওরা কেবল তোমাকেই ছবি দেখার অনুমতি দিয়েছে, অন্য কাউকে নয়।
তাহলে কিশোর-কিশোরীদের অন্তরঙ্গ ছবি পাঠানো হলে, সেই পরিস্থিতিতে তাদের ভালো উপায় বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা কীভাবে সাহায্য করতে পারি?
প্রথমেই আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তানকে বলুন, কেউ যদি নিজে থেকেই তাদের অন্তরঙ্গ ছবি পাঠায়, তাহলে অবিলম্বে সেটা মুছে দেওয়া উচিত এবং সেই ব্যক্তিকে জানিয়ে দেওয়া উচিত এরকম ছবি যেন আর না পাঠায়, (যদি সেই ব্যক্তি তাদের অফলাইনে বা ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত কেউ হয়) অথবা(যদি সে অপরিচিত কেউ হয় বা শুধুই অনলাইনে পরিচিত কেউ হয়), তাহলে সেই ব্যক্তিকে ব্লক করে দেওয়া উচিত, যাতে সে আর যোগাযোগ করতে না পারে। এরপরেও যদি সেই ব্যক্তি অন্তরঙ্গ ছবি পাঠাতে থাকে, তাহলে তাদেরকে প্রাপ্তবয়স্ক কারোর সাথে বা বিশ্বস্ত কারোর সাথে এই নিয়ে আলোচনা করা উচিত।
এরপরে, তারা যে অন্তরঙ্গ ছবির অনুরোধ করেছিল বা যেগুলো পেয়ে খুশি হয়েছিল, সেগুলো নিয়ে কী করা উচিত, সে বিষয়ে তাদের সাথে কথা বলুন।
তাদের নিজেদেরকে এই প্রশ্নগুলো করার উৎসাহ যোগান:
এগুলো সব একটাই সহজ নিয়মে পড়ে: ছবিতে থাকা ব্যক্তি (বা লোকজন) এটা শেয়ার করার বিষয়ে ইচ্ছুক কি না, সে বিষয়ে সম্পূর্ণ নিশ্চিত না হলে, এটা শেয়ার করা উচিত নয়।
সমস্যা হলো কোনো নিয়ম সুস্পষ্ট হলেও, এই নিয়ম কেন না মানলেও চলে, মানুষ তার অজুহাত বার করতে পারে। একে বলা হয় নৈতিক বিচ্ছিন্নতা এবং তা কিশোর-কিশোরীদের অন্তরঙ্গ ছবি শেয়ার করার সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।
এই কারণেই উল্লিখিত নিয়মের পাশাপাশি, আমাদের চারটি প্রধান নৈতিক বিচ্ছিন্নতা প্রক্রিয়ার সরাসরি মোকাবিলা করতে হবে:
কারোর অন্তরঙ্গ ছবি শেয়ার করা ক্ষতিকর, তা অস্বীকার করা।
তাদের মতে: "কোনো নিউড ছবি শেয়ার করা বড় ব্যাপার নয়, যদি সেটি অন্য লোকেরা ইতিমধ্যে দেখে থাকেন।"
আপনি বলবেন: যতবার তুমি কোনো অন্তরঙ্গ ছবি শেয়ার করবে, ততবারই তুমি যে ব্যক্তির ছবি তাকে কষ্ট দেবে। এটা শেয়ার করার ক্ষেত্রে তুমি প্রথম ব্যক্তিই হও কিংবা একশতম—তা কোনো ব্যাপার না।
অন্তরঙ্গ ছবি শেয়ার করার ভালো দিকও আছে, এমন বলে শেয়ার করার বিষয় সমর্থন করা।
তাদের মতে: “কোনো মেয়ের ছবি শেয়ার করা হলে, অন্য মেয়েরাও সেগুলো পাঠানোর ঝুঁকি বুঝতে পারে।”
আপনি বলবেন: কেউ তোমার ক্ষতি করলে, তারও ক্ষতি করা উচিত না! কাউকে মানসিক কষ্ট না দিয়েও বিভিন্ন উপায়ে দেখানো যায় যে, অন্তরঙ্গ ছবি পাঠানো বাজে জিনিস। (আর তাছাড়া, কাউকে অন্তরঙ্গ ছবি পাঠাতে বারণ করাটা আপনার কাজের মধ্যে কীভাবে পড়ে?)
নিজেদের দায়িত্ব এড়ানো।
তাদের মতে: "যদি আমি শুধুমাত্র একজনের সাথে কোনো নিউড ছবি শেয়ার করি এবং তারপরে সে যদি এটা অন্যদের সাথে শেয়ার করে, তাহলে সেটা ঠিক আমার দোষ নয়।"
আপনি বলবেন: কেউ তোমাকে অন্তরঙ্গ ছবি পাঠালে, তোমার কাছে সেটা ব্যক্তিগত হিসাবেই থাকবে বলে সে বিশ্বাস করে। সকলের সাথে সেটি শেয়ার করলে, তা বিশ্বাসঘাতকতার সামিল।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে বা ঘটনার শিকার হওয়া ব্যক্তিকে দোষারোপ করা।
তাদের মতে: “কোনো মেয়ের এতে আশ্চর্য হওয়ার কথা নয়, যদি ব্রেক আপের পরে তার ছবি শেয়ার করা হয়।”
আপনি বলবেন: "ছেলেরা শিশুসুলভ, দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অশোভন আচরণ করবে এটা আশা করা যায়"-এই অজুহাত দেবে না অথবা বলবে না মেয়েটিরই এটা "ভালোভাবে জানা উচিত ছিল"। তুমি কোনো অন্তরঙ্গ ছবি পেলে, তা শেয়ার করার বিষয়ে বন্ধুবান্ধব ও সমবয়সীদের থেকে অনেক চাপ আসতে পারে, কিন্তু কেউ যদি তোমাকে এমন কিছু পাঠায় এবং তার অনুমতি ছাড়াই যদি তুমি তা শেয়ার করো, তাহলে তোমাকেই দোষারোপ করা উচিত।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে দোষারোপ করাও অন্যতম কারণ, যে জন্য আমাদের কিশোর-কিশোরীদের অন্তরঙ্গ ছবি পাঠানোর পরিণতির ভয় না দেখিয়ে, তা শেয়ার না করার বিষয়েই জোর দেওয়া উচিত। দুটোর ক্ষেত্রেই কিশোর-কিশোরীরা যে শেয়ার করছে তার পরিবর্তে, যে পাঠাচ্ছে তাকেই দোষারোপ করেন। পরিবর্তে, নিশ্চিত করুন আপনার কিশোর বয়সী সন্তানকে কেউ অন্তরঙ্গ ছবি পাঠালে, তারা যেন সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।