অনলাইনে তৈরি সম্পর্ক পরিচালনা করা | Parentzone (পেরেন্টজোন)
Parentzone
23 মার্চ, 2024
এটা অবশ্যম্ভাবী যে, কোনো এক সময় আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তান বন্ধুত্বের কারণে কোনো না কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হবে এবং তা সম্পূর্ণ অনলাইনে বা অনলাইন-অফলাইন উভয় ক্ষেত্রেই তৈরি কোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে হতে পারে।
সম্পর্কের সহজ বিচ্ছেদ থেকে শুরু করে জটিল, আবেগপূর্ণ ভাঙন — যাই হোক না কেন, এখানে আপনাকে নিজের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করতে হবে যাতে কিশোর বয়সী সন্তান ইতিবাচকভাবে জীবনে এগিয়ে যেতে পারে।
সম্পর্কের সহজ বিচ্ছেদ থেকে শুরু করে জটিল, আবেগপূর্ণ ভাঙন — যাই হোক না কেন, এখানে আপনাকে নিজের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করতে হবে যাতে কিশোর বয়সী সন্তান ইতিবাচকভাবে জীবনে এগিয়ে যেতে পারে।
অনলাইন সম্পর্ককে গুরুত্ব দিন
সব বন্ধুত্ব ও সম্পর্ককেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। এমনকি সম্পর্কটি শুধুমাত্র-অনলাইনের হলেও, সেটি বাস্তবিক সম্পর্কই হয়।
অনলাইনে গড়ে ওঠা সম্পর্কগুলো আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তানের জন্য ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, যতটা তারা স্কুলে বা সপ্তাহান্তে দেখা হওয়া মানুষের সঙ্গে গড়ে তোলে। এই ধরনের বন্ধুদের যথাযথ সম্মান দেওয়ার চেষ্টা করুন।
ইতিবাচক পদক্ষেপ নিন
আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তান Instagram-এ কাউকে ব্লক করেছেন বা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন এমনটা জানতে পারলে আপনার তা কোনো অঘটনের প্রাথমিক লক্ষণ বলে মনে হতে পারে। তবে এটি সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষণও হতে পারে।
ভাল খবর হলো: যদি তিনি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান বা কাউকে ব্লক করে থাকেন, তবে তা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। এটি তার আত্ম-সচেতনতা এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে নিজেকে রক্ষা করার জন্য উপলভ্য টুল ব্যবহার করার দিকটিকে প্রতিফলিত করে।
তাড়াহুড়ো করে কী ঘটেছে এবং তার কারণ খুঁজে বের করতে চাওয়াই স্বাভাবিক। কী ঘটেছে তা আরও বিস্তারিত জানতে চাওয়ার চেয়ে, আপনার কিশোর সন্তানের নেওয়া ইতিবাচক পদক্ষেপকে স্বীকার করা এবং আপনি এতে কত খুশি হয়েছেন তা জানিয়ে কথোপকথন শুরু করলে, কথোপকথনটি বেশি কার্যকর হতে পারে।
একসাথে সময় কাটানো
কিশোর-কিশোরীর সাথে কথোপকথনের জন্য সঠিক সময় বেছে নিতে, আপনাকে অভিভাবকত্বের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে হবে।
একসাথে সময় কাটানোর মুহূর্ত হচ্ছে সেইসব মুহূর্ত, যখন আপনি আরাম করে বসে তার জীবনে কী ঘটছে তা নিয়ে কথা বলার ও আলোচনা করার সুযোগ পান। তা রান্না করার সময় বা গাড়িতে ভ্রমণের সময়ও হতে পারে। কখন বিষয়টি নিয়ে শান্তভাবে আলোচনা করার সঠিক সময়, তা আপনি ঠিক বুঝতে পারবেন।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সেই মুহূর্তটি স্বাভাবিকভাবে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা। কোনো চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করবেন না - নাহলে তার কাছে কথোপকথনটি জিজ্ঞাসাবাদ বলে মনে হতে পারে।
বাস্তব জীবনে প্রতিক্রিয়া
কিশোর-কিশোরি যাকে ব্লক করেছেন বা যার বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন, দৈনন্দিন জীবনেও যদি তার সম্মুখীন হন, তখন বিষয়টি আরও জটিল হয়ে যায় — এবং সেক্ষেত্রে তিনি অপর ব্যক্তির প্রতিশোধের কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন বোধ করতে পারেন।
যদি সেই ব্যক্তি জানতে পারেন যে আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তান আর তাকে Instagram-এ ফলো করছেন না, তাহলে কী ঘটেছে তা বোঝা খুব একটা কঠিন নয়।
আপনি আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তানকে ভাবতে সাহায্য করতে পারেন যে যখন সে অন্য ব্যক্তিটির সম্মুখীন হবেন, তখন তিনি কীভাবে সেই পরিস্থিতি সামলাবেন। আপনারা একসাথে কিছু প্রতিক্রিয়ার মহড়া দিতে পারেন।
পরিস্থিতি যাতে উত্তপ্ত না হয় সেজন্য তাকে দোষারোপ করে কিছু বলবেন না। যেমন, তিনি "তুমি এটা করেছ…"-এর পরিবর্তে "আমার মনে হয়..." দিয়ে কথা শুরু করতে পারেন।
এছাড়াও, আপনার কিশোর-কিশোরী অন্য কোনো ব্যক্তিকে ব্লক করার পরিবর্তে Instagram-এ তাকে বিধি-নিষেধযুক্ত করার বিকল্পও বেছে নিতে পারেন। এর ফলে আপনার সন্তানের সঙ্গে কেউ ইন্টার্যাক্ট করতে চাইলে তা কীভাবে করবেন সেই নিয়ন্ত্রণ তার (আপনার সন্তানের) কাছেই থাকবে — যেমন তিনি কী কী দেখতে পাবেন তা নিয়ন্ত্রণ করা বা তার কমেন্ট অনুমোদন করা। আরও পড়ুন এখানে।
আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তানকে মনে করিয়ে দিন যে: হয়তো সবসময় আমাদের এরকম মনে হয় না, কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়াতে কাউকে ফলো করার বিষয়টি একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। তিনি কাকে ফলো করবেন, তা তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত।
শুধু শুনুন
মাঝে মাঝে, শোনাই হলো মা-বাবার উপযুক্ত কাজ। সন্তানকে মনের কথা বলতে দিন। তিনি হয়তো আপনার কোনো পরামর্শ ছাড়াই পরবর্তী করণীয় ভেবে নিতে পারেন - আপনার উপস্থিতিই হয়তো তার পক্ষে যথেষ্ট।
মনে রাখবেন: কিশোর-কিশোরিরা নিজে ভুল করলে এবং তার ফলে উদ্ভূত সমস্যা নিজেরাই কাটিয়ে উঠতে পারলে, তাদের সহনশীলতার বিকাশ ঘটবে। আপনি তাদের শিশু বয়স থেকে যেসব সামাজিক দক্ষতা শিখিয়েছেন, সেগুলো এই সব ক্ষেত্রেই পরীক্ষা করা যায়।
আপনি হয়তো দেখতে পাবেন যে তারা সবকিছু ভুলে এগিয়ে গেছেন অথচ তাদের সাথে যা ঘটেছে তা নিয়ে আপনি এখনও হতাশ বা বিরক্ত বোধ করছেন। মূল উদ্দেশ্য হলো আপনি নিজে এগিয়ে এসে সমস্যার সমাধান না করে, তাদেরকেই পরিস্থিতি সামলাতে দিন।
এগিয়ে যান
আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তানকে জিজ্ঞাসা করুন তিনি পরবর্তীতে কী করতে চান। সহায়ক প্রশ্ন হতে পারে: তিনি কি এই সম্পর্ক শুধরে নিতে চান?
যদি তা না হয়, তাহলে ধরে নেবেন না বা আশা করবেন না যে, যে অনলাইন স্থান – বা স্থানগুলো থেকে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল সেখান থেকে তিনি কিছু সময় দূরে থাকবেন। তার মনে হতে পারে যে তিনি কোনো গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বা সহায়ক নেটওয়ার্ক হারাচ্ছেন।
তবে, পরবর্তীতে আবার যোগাযোগের পরিণতি সম্পর্কে তিনি হয়তো ভাবতে পারেন - যেমন, কোথায় তাদের দেখা হতে পারে বা গ্রুপ ছেড়ে দিলে তার মিউচুয়াল ফ্রেন্ডদেরও হারাতে হতে পারে।
তাকে বিবেচনা করতে হবে, যে তিনি কাউকে সম্পূর্ণভাবে এড়াতে পারবেন না। এটি একটি কঠিন পরিস্থিতি, বিশেষ করে যদি তিনি এখনও অপর ব্যক্তির প্রতি আবেগপ্রবণ থাকেন।
কিন্তু আপনি এখনও তাকে সাহায্য করার জন্য উপস্থিত থাকতে পারেন। আপনি তার ইচ্ছেমতো কোনো পরিকল্পনা তৈরি এবং অনুসরণ করতে সাহায্য করতে পারেন, যার মধ্যে কোনো নির্দিষ্ট বন্ধু বা সোশ্যাল গ্রুপ থেকে সরেও আসাও থাকতে পারে। এটি হতে পারে সেই অন্য ব্যক্তির সাথে অনলাইন স্পেস শেয়ার করার বিষয়টি মেনে নেওয়া — এবং সেই ব্যক্তি কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন তা বোঝা।
পরবর্তীতে যা ঘটবে তার দায়িত্ব সন্তানকেই নিতে সাহায্য করার জন্য তার ইচ্ছাকে সমর্থন জানান — এবং তার নেতিবাচক অভিজ্ঞতাকে ভবিষ্যতের একটি ইতিবাচক অভিজ্ঞতায় পরিণত করতে সহায়তা করুন।
আরও পরামর্শ চান? ফ্যামিলি সেন্টারের আরও নিবন্ধ পড়ুন এখানে।
সম্পর্কিত রিসোর্স
অনলাইন হেনস্থার ঘটনা প্রতিরোধ করার পরামর্শ ও টুল
আরও পড়ুন
