অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডাঃ হিনা তালিব (Hina Talib) ও Meta-র নিকোল লোপেজের (Nicole Lopez) মধ্যে হওয়া ফায়ারসাইড আলোচনা
Meta
মার্চ 20, 2024
এই কথোপকথনটি দৈর্ঘ্য ও স্পষ্টতার জন্য এডিট করা হয়েছে।
নিকোল: আমাদের "স্ক্রিন স্মার্ট" সিরিজের একজন ক্রিয়েটর, শিশু-রোগ ও কিশোরী-কিশোরীদের ওষুধের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, লেখক ও মা ডাঃ হিনা তালিবকে আমাদের সঙ্গে পেয়ে, আমি খুবই আনন্দিত। ব্যক্তিগতভাবে, একজোড়া যমজ সন্তানের মা হিসাবে, আমি নিজেও ডাঃ তালিবের পরামর্শের উপর নির্ভর করি, যাতে কীভাবে আর কখন আমার বাচ্চাদের সঙ্গে কঠিন পরিস্থিতির বিষয়ে কথা বলা ঠিক হবে, তা বুঝতে পারি। তিনি সন্তান লালন-পালন করার বিষয়ে বাস্তবসম্মত ও চিন্তাশীল নির্দেশিকা দেন। Instagram-এ @teenhealthdoc এবং তার ওয়েবসাইট-এ তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, কিন্তু আমি তাকেই নিজের পরিচয় দেওয়ার জন্য মাইক এগিয়ে দিচ্ছি।
ডাঃ তালিব: অল্পবয়সী ছেলেমেয়ে আর সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্কে আপনার সঙ্গে কথা বলতে পেরে আমিও খুব খুশি হয়েছি, কারণ আমি জানি Meta-তে অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আপনার একটি প্রভাবশালী ভূমিকা রয়েছে। হ্যাঁ, আমি কিশোরী-কিশোরীদের ওষুধের একজন বিশেষজ্ঞ এবং NYC-এ একটি প্রাথমিক ও প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান Atria-এ কাজ করছি। আমি আমেরিকান পেডিয়াট্রিক্স অ্যাকাডেমির একজন মুখপাত্র এবং তাদের কমিউনিকেশন ও মিডিয়া কাউন্সিলে কাজ করি। অনেকেই আমার পেডিয়াট্রিক সাবস্পেশালিটি, অ্যাডোলসেন্ট মেডিসিনের (কিশোরী-কিশোরীদের ওষুধ) বিষয়ে শোনেননি। আমার জীবনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো কিশোর-কিশোরীদের ও তাদের পরিবারের যত্ন নেওয়া। আমার বিশেষত্বের প্রশিক্ষণে আমি মানসিক স্বাস্থ্য, স্ত্রীরোগবিদ্যা, চর্মরোগ, স্পোর্টস সংক্রান্ত ওষুধপত্র ও ডিজিটাল সুস্থতা বিষয়ে গভীর দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছি, যার সাহায্যে আমি কিশোর-কিশোরীদের বর্তমান চাহিদা পূরণে আরও কার্যকরভাবে সহায়তা করতে পারি।
নিকোল: কোনো মা-বাবা সোশ্যাল মিডিয়া বা স্ক্রিন টাইম সম্পর্কে কীভাবে তাদের কিশোর-কিশোরী সন্তানের সঙ্গে কথোপকথন শুরু করবেন তা বুঝতে পারছেন না, এমন মা-বাবার উদ্দেশ্যে আপনি কী বলবেন? কীভাবে তারা নিজেদের পরিবারের লোকেদের মধ্যে, খোলামেলা ও সহায়ক কথাবার্তা বলা শুরু করতে পারেন?
ডাঃ তালিব: আমি দেখেছি, সত্যিকারের কৌতূহল থাকলে আর খোলা মনে কথা বললে, এই ধরনের কথাবার্তায় সবচেয়ে বেশি সাফল্য পাওয়া যায়। কীভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা শুরু করবেন, সেই জন্য এখানে তিনটি পরামর্শ রয়েছে। প্রথমেই, কৌতূহল দেখান এবং তিনি কীভাবে তার প্রযুক্তি ব্যবহার করেন, কোন অ্যাপ বা প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেন, কাদের বেশি ফলো করেন ও কেন এবং কোন গেমগুলো তিনি সবচেয়ে বেশি উপভোগ করতে পারেন, সেই সম্পর্কে তার সঙ্গে কথা বলুন। এর সঙ্গে, আপনি যদি তার বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট একসাথে দেখতে এবং তার সঙ্গে তার প্রিয় গেমগুলো খেলতে একসাথে কিছুটা সময় কাটাতে পারেন, তাহলে খুব ভালো হয়। দ্বিতীয়ত, মনোযোগ দিয়ে তার মতামত শুনুন। তাকে প্রশ্ন করুন, "তুমি নিজের সোশ্যাল মিডিয়া বা ফোন ব্যবহার করে কতটা সন্তুষ্ট?", আমি নিজের অনুশীলনের ক্ষেত্রে কিশোর-কিশোরীদের এই প্রশ্ন করে আক্ষরিক অর্থেই ভালো ফলাফল পেয়েছি। আমি তাদের প্রশ্ন করে দেখেছি, মিডিয়া ব্যবহারের কোন অংশগুলো তাদের ভালো লেগেছে, সেগুলোর সঙ্গে জড়িত ও কার্যক্ষম বলে মনে হয়েছে এবং কোন অংশগুলো তাদের ভালো লাগতে পারে। এবং তৃতীয়ত, তাদের বন্ধুদের সম্পর্কে এবং সেই বন্ধুরা কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছেন, সেই সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন। চা বা অন্য কিছু পান করার সময়, গল্পচ্ছলে কথা বলুন! প্রায়শই আমাদের নিজেদের সম্পর্কে কিছু বলার চেয়ে বন্ধুদের সম্পর্কে কথা বলা সহজ হয় এবং এই একই উপায়ে আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তানের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন যে, আপনি নিজেও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভালো বা খারাপ পরিস্থিতি কীভাবে সামলান। সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্কে কথা বলার অন্যান্য উপায় হলো, কথা শুরু করার সময় সোশ্যাল মিডিয়ার সম্পর্কে কথা না বলে অন্য বিষয়ে কথা বলা। পরিবর্তে, তার মানসিক স্বাস্থ্য, স্কুল, খেলাধুলা, ঘুম, অন্যান্য সমস্যা বা তার জীবনের অন্যান্য দিক নিয়ে কথা বলুন এবং সোশ্যাল মিডিয়া কীভাবে তাকে সাহায্য করে বা সমস্যায় ফেলে, ধীরে ধীরে সেই কথা দিয়ে শুরু করুন। এই ধরনের কথোপকথন শুরু করার জন্য Meta-র ফ্যামিলি সেন্টার-এ বিভিন্ন রিসোর্স রয়েছে।
নিকোল: আপনি কিশোর-কিশোরীদের উপর Instagram-এর কোন ভালো প্রভাব দেখেছেন? কিশোর-কিশোরী সন্তানরা যাতে নিজেদের ভালো লাগবে এমন আরও বেশি কনটেন্ট খুঁজে পেতে পারেন, সেই বিষয়ে সাহায্য করার জন্য মা-বাবাদের কাছে কোনো উপায় আছে কি?
ডাঃ তালিব: কমিউনিটি খুঁজতে, ফ্রেন্ডদের সঙ্গে যোগাযোগ, নতুন নতুন দক্ষতা আয়ত্ত ও নিজেকে প্রকাশ করতে, Instagram ও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া দুর্দান্ত প্ল্যাটফর্ম হতে পারে। অনেক কিশোর-কিশোরীই, যারা বিশেষত ঐতিহাসিকভাবে প্রান্তিক কমিউনিটির, আমার সঙ্গে তাদের মতামত শেয়ার করে জানান যে, তারা অনলাইনে "নিজেদের পছন্দের লোকদের খুঁজে পান"। যেসব কিশোর-কিশোরীরা নিজেদের LGBTQIA+ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন, তারা জানিয়েছেন যে কীভাবে তারা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সমর্থন, শিক্ষা ও সংস্থান পেয়েছেন। বিশেষত বিগত কয়েক বছরে, কিশোর-কিশোরীরা এও জানিয়েছেন তারা অনলাইনে যেসব প্ল্যাটফর্ম, লোকজন বা সংগঠনকে ফলো করেন, সেগুলোর মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন টুল বা মানসিক চাপের পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করার দক্ষতা সম্পর্কে জেনেছেন, এমনকি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কিছু পরামর্শও পেয়েছেন! সব শেষে বলতে পারি, কিশোর-কিশোরীরা এখন সোশ্যাল মিডিয়াকে নিজেদের মতামত প্রকাশের স্থান হিসাবে দেখছেন, ফলে সোশ্যাল মিডিয়া তাদের কাছে আত্মপক্ষ সমর্থনেরও একটা জায়গা এবং আমি আশা করি এই প্ল্যাটফর্মের সাহায্যে তারা নিজেদের মানানসই জগতের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে পারবেন।
মা-বাবাদের ক্ষেত্রে বলব, কিশোর-কিশোরীদের ভালো অনলাইন অভিজ্ঞতা লাভের জন্য কী কী টুল ও প্ল্যাটফর্ম উপলভ্য রয়েছে, সেগুলো তাদের জেনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অনলাইনে সবসময়ই যে ভালো অভিজ্ঞতা হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। যেমন, মা-বাবারা কিশোর-কিশোরী সন্তানদের কনটেন্ট সুপারিশের সেটিংস, সময় পরিচালনা করার সেটিংসে সাহায্য করতে পারেন এবং উপযুক্ত মনে হলে তাদের প্রোফাইলে অভিভাবকীয় তত্ত্বাবধান সেট আপ করতে পারেন।
নিকোল: অনলাইনে ভালো অভ্যাস নিয়ে কথোপকথন শুরু করার জন্য, বেশিরভাগ মা-বাবাই তাদের কিশোর-কিশোরী সন্তানের 13তম জন্মদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান না। কিশোর-কিশোরীরা সোশ্যাল মিডিয়াতে যোগ দেওয়ার আগেই, তাদের সেই পরিবেশ সম্পর্কে জানাতে যেসব মা-বাবারা তৈরি হচ্ছেন, তাদের আপনি কী পরামর্শ দেবেন?
ডাঃ তালিব: আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা অনুসারে, সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগ দেওয়ার জন্য কিশোর-কিশোরীদের কোনো নির্দিষ্ট বয়স নেই, তবে সব প্ল্যাটফর্মের নিজস্ব পরিষেবার শর্তাবলী অনুযায়ী অবশ্যই সর্বনিম্ন বয়সের একটি সীমা থাকে, যা গুরুত্বপূর্ণ। একইভাবে, সোশ্যাল মিডিয়া কোনো সীমাবদ্ধ ধারণা নয়, এটি এক জিনিস নয় এবং সোশ্যাল মিডিয়া মানে শুধুমাত্র Instagram, Facebook ও TikTok নয়। আমি প্রতিটি কিশোর-কিশোরীকে আলাদাভাবে দেখি, কারণ প্রত্যেকের জীবনে বিভিন্ন রকমের বিষয় জড়িত থাকে যেগুলোর গুরুত্ব অনন্য হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কোনো পরিবারকে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার শুরু করার বয়স সম্পর্কে পরামর্শ দিতে বলা হলে, আমি অভিভাবকদেরকে এই প্রশ্নটি ভেবে দেখতে বলব, তারা তাদের কিশোর-কিশোরী সন্তানদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে সহায়তা করার জন্য কতটা সময় ও মনোযোগ দিতে পারবেন।
কমবয়সী বাচ্চাদের মা-বাবাদের যখন আমি বলি ডাইরেক্ট মেসেজিং বা iMessage অনেক ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ার মতোই অর্থবহ, তারা প্রায়ই অবাক হয়ে যান। Youtube Kids এবং Minecraft ও Roblox-এর মতো iPad বা ট্যাবলেট গেমও সোশ্যাল মিডিয়া। তাই এই কথোপকথনগুলো এলিমেন্টারি স্কুলের (প্রাথমিক স্কুল) বাচ্চাদের মা-বাবাদের মধ্যে শুরু হওয়া দরকার এবং আমার দুই সন্তান লোয়ার স্কুলে (মাধ্যমিক স্কুল) পড়ার কারণে আমি ইতিমধ্যেই এই ধরনের কথোপকথনে অংশ নিয়েছি। এটিও গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা যেন এই কথা বলা তাড়াতাড়ি শুরু করি, যাতে আমাদের বাচ্চারা তাদের সহায়তার প্রয়োজন হলে আমাদের সঙ্গে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। সব শেষে, এমন কথোপকথন আমাদের মতো পরিবার ছাড়াও, আপনার সন্তানের ক্লাসরুম বা ক্লাসের বাচ্চাদের মা-বাবা ও শিক্ষকদের মধ্যেও হওয়া দরকার। বাচ্চা যে কমিউনিটিতে বড় হচ্ছে, সেগুলোর সব জায়গাতেই এই নিয়ে কথোপকথন প্রয়োজন। এটি অভিভাবকদের কাছে অনেক সময়ই চ্যালেঞ্জিং বিষয়, কারণ প্রত্যেক পরিবার ডিভাইস ও সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন মূল্যবোধ পোষণ করেন।
নিকোল: আমি সম্পূর্ণ একমত এবং জানাতে চাই আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তানের সঙ্গে এখানে উল্লেখ করা প্রসঙ্গে কীভাবে কথা বলবেন, সেই বিষয়ে আমাদের ফ্যামিলি সেন্টারে শিক্ষামূলক কিছু রিসোর্স রয়েছে, যেমন, আত্মসচেতনতা ও মানসিক নিয়ন্ত্রণের উপর ParentZone-এ একটি দুর্দান্ত আর্টিকেল আছে। কিশোর-কিশোরীদের সোশ্যাল মিডিয়ায় ভালো উপায়ে যুক্ত হওয়ার কথা বলার সময়, ঠিক কোন কোন নীতির কথা আপনার মাথায় আসে? এবং/অথবা, এই সম্পর্কে তাদের মা-বাবার সঙ্গে কথা বলার ক্ষেত্রে তাদের কীভাবে ভাবা উচিত?
ডাঃ তালিব: এই বিষয়ে আমার কিছু নীতি আছে। প্রথমে, একটি উদ্দেশ্য সেট করার চেষ্টা করুন অথবা আওয়াজ করে নিজেকে বলার চেষ্টা করুন যে আপনি কেন ফোন ব্যবহার করছেন। হতে পারে আপনি কোনো কাজের মাঝে 10 মিনিটের বিরতি চাইছেন, 3 জন ফ্রেন্ডকে মেসেজ পাঠাতে চাইছেন এবং কোনো কুকির রেসিপি সম্পর্কে আরও জানতে চাইছেন। আওয়াজ করে নিজেকে বারণ করলে তা বেশ কাজ করে এবং সেই মুহূর্ত ছাড়াও আরও বেশ কিছুটা সময় আপনার ফোন ব্যবহার না করার সম্ভাবনা থাকে।দ্বিতীয়ত, নিজের অনুভূতি মেনে চলুন। সোশ্যাল মিডিয়াতে সময় কাটাতে আপনার কেমন লাগে বা আপনি যাদের সঙ্গে ইন্টার্যাক্ট করছেন তারা আপনাকে কেমন বোধ করান, সেই বিষয়ে মনোযোগ দিন। খেয়াল করুন আপনি চনমনে, অনুপ্রাণিত বা উৎসাহিত বোধ করছেন, না কি ক্লান্ত, একাকী বা বিহ্বল বোধ করছেন।এবং তৃতীয়ত, বাস্তব জীবনে আপনি যেভাবে আচরণ করেন, অনলাইনেও সেই একইভাবে আচরণ করুন, কথা বলুন ও কোনো কিছু শেয়ার করুন। আপনি যদি কোনো বিষয়ে নিজের দাদু-দিদাকে জানাতে না চান বা কোনো বিষয় খবরে আনতে না চান, তাহলে সেই বিষয়ে অনলাইনেও কিছু বলবেন না। কারণ আপনি কখনোই জানেন না কথাগুলো কোথায় যাবে, কারা তা দেখবে এবং কোন প্রসঙ্গে তা ব্যাখ্যা করা হবে। বাস্তব জীবনে ও অনলাইনে, দুই জায়গাতেই নিজের ও অন্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন।
নিকোল: আপনি কি কখনও আপনার রোগীদের সঙ্গে অনলাইনে ঘটে যাওয়া কোনো কিছু সম্পর্কে কঠিন কথোপকথন করেছেন? এই আলোচনা কেমন ছিল?
ডাঃ তালিব: অনলাইনে ঘটতে পারে এমন ঘটনা আবেগপূর্ণ ছিল না কি চ্যালেঞ্জিং ছিল, সেই সম্পর্কে জানার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো কিশোর-কিশোরীরা অনলাইনে যা ব্যবহার করেন, তা পরিবর্তন করার জন্য তাদের উৎসাহিত করা বা তা বেছে নেওয়ার জন্য তাদের অনুমতি দেওয়া। কীভাবে এই কাজ করা যায়, সেই সংক্রান্ত সেরা আইডিয়াগুলো অল্পবয়সীদের সাথে কথোপকথনের সময় তাদের থেকেই পেয়েছি। নিজেদের ভালো তারা খুব ভালো করে বোঝেন এবং কোনো ভুল শোধরানো সম্পর্কে অথবা তাদের জীবনযাপন বা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত লক্ষ্যের সঙ্গে কোনটি সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক হবে, তা জানেন।কিশোর-কিশোরী নিজে অনলাইনে কী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, তা বলার তুলনায় তাদের সমবয়সীরা অনলাইনে কোন কোন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন, সেই সম্পর্কে কথা বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। সেখান থেকে কথা বলা শুরু করুন এবং গল্প শুনুন। এই আলোচনা কখনো আকর্ষণীয়, আবার কখনো কখনো হৃদয়বিদারকও হতে পারে এবং তাদের মনের কথা বলার জন্য সত্যিই কাউকে প্রয়োজন হয়।
নিকোল: আমাদের অডিয়েন্সের তরফে একটি শেষ প্রশ্ন, "সোশ্যাল মিডিয়া যেমনটা একজন প্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে আমার মনে তুলনাবোধ সৃষ্টি করে, সেইভাবে আমি কীভাবে আমার সন্তানকে সোশ্যাল মিডিয়ার হওয়া তুলনার ক্ষেত্রে সাহায্য করব?" ডাঃ তালিব, এই বিষয়ে আপনার কী বক্তব্য?
ডাঃ তালিব: থিওডোর রুজভেল্টের মত অনুসারে, "তুলনা হলো এমন জিনিস, যা অন্যের সঙ্গে তুলনা করতে করতে আমাদের নিজস্ব আনন্দকে চুরি করে"। সামাজিক তুলনা, কিশোর-কিশোরীদের আত্মমর্যাদাকে প্রভাবিত করতে পারে। এই অবস্থায়, তারা নিজেদের জীবনের খারাপ পরিস্থিতিতে অন্যদের কমেন্টকে গুরুত্ব দেন এবং জীবনের অন্যান্য পরিস্থিতির তুলনায় অনেক বেশি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যান। তাই আমরা কীভাবে তাদের সাহায্য করতে পারি, অনলাইনের পাশাপাশি বাস্তব জীবনে তাদের আত্মমর্যাদা গড়ে তোলার জন্য যা করতে পারি তা অবশ্যই করতে হবে এবং যারা তাদের জীবনে আনন্দ দেয় না, তাদের সম্মানিত ও মূল্যবান বোধ করায় না, তাদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে শেখাতে হবে। সত্য়ি বলছি, আপনি নিজেকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন এটি সেই অনুভূতির উপরেই নির্ভরশীল। কোনো বিষয়ে অনুভূতি জাগালে, তা সামাজিক তুলনার ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী প্রতিষেধক হতে পারে। আমি সম্প্রতি "নেভার এনাফ"-এর রচয়িতা জেনিফার ওয়ালেসকে (Jennifer Wallace) এই বিষয়ে কথা বলতে শুনেছি এবং সেই বক্তব্যটি খুবই উপকারী ছিল। ছোট বা বড় উপায়ে, আমাদের সবাইকে নিজেদের কিশোর-কিশোরী সন্তানদের ও অন্যান্য যে সব কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করি, তাদের বোঝাতে হবে যে তারা গুরুত্বপূর্ণ, তাদের বিভিন্ন কাজে দক্ষতা ও মূল্যবোধ আছে ও এই পৃথিবীতে তাদেরও অবদান আছে।
আমি কিশোর-কিশোরীদের মন ভালো করা কনটেন্টের সাথে ইন্টার্যাক্ট করতে বলি। "ডি-ফ্রেন্ড ডিসেম্বর" আসলেই ভালো জিনিস এবং যারা আপনার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন না, তাদের আনফলো করাই ভালো। একইভাবে, আমি প্রায়শই কিশোর-কিশোরীদের লাইকের সংখ্যা দেখানো বন্ধ করা, যেসব লোকেদের আর পছন্দ নয়, তাদেরকে অপছন্দের বিষয়টি জানতে না দিয়েই সীমিত করার পরামর্শ দিই। আবারও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, নিয়মিতভাবে আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তানের সাথে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা।
নিকোল: তাহলে আমরা অনেক বিষয়ই কথা বলেছি, কিন্তু আজকের কথোপকথন থেকে মা-বাবাদের কী শিখতে হবে?
ডাঃ তালিব: সোশ্যাল মিডিয়ার মানে প্রত্যেকের কাছে আলাদা আলাদা হয় এবং কিশোর-কিশোরীদের বিভিন্ন বয়স ও বয়স ভিত্তিক পরিপূর্ণতা অনুসারে বিভিন্ন চাহিদা থাকে। কিশোর-কিশোরীদের তাদের অনলাইন জীবনে সবচেয়ে ভালোভাবে সাহায্য করতে, আমাদের তাদের বিষয়ে দেখতে ও তাদের কথা শুনতে হবে। আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তান সোশ্যাল মিডিয়াতে কীভাবে সঠিক অভিজ্ঞতা পেতে পারেন এবং কীভাবে তারা বিভ্রান্ত হতে পারেন, সেই সম্পর্কে তার সঙ্গে কথা বলুন। বিবেচক হোন এবং বুঝুন যে সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে আপনার সম্পর্কও কিন্তু কিশোর-কিশোরীদের কাছে একটি আদর্শ… এটি এই প্রসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী সাহায্য করতে পারে। Instagram-এর মতো অনেক অ্যাপে সাহায্য করার জন্য অভিভাবকীয় টুল ও ডিফল্ট সেটিংস রয়েছে, কিন্তু আপনি নিজের কিশোর-কিশোরী সন্তানের সঙ্গে কথা বললে সোশ্যাল মিডিয়াতে তার ভালো অভিজ্ঞতা পেতে সবচেয়ে সুবিধা হবে।
নিকোল: অনেক ধন্যবাদ ডাঃ তালিব। আমরা জানি, প্রযুক্তি ব্যবস্থা পরিবর্তিত হওয়ার সাথে সাথে জানার মতো বিষয়ও বাড়ছে এবং পরিবারগুলো যাতে এই পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে পারে এবং একে অপরকে সমর্থন করতে পারে, সেজন্য আমরা মা-বাবাদের সহায়তা করা চালিয়ে যেতে চাই।
ডাঃ তালিব: নিকোল, আমরা যাতে কিশোর-কিশোরীদের সাহায্য করতে পারি, সেই জন্য অনবরত প্রয়োজনীয় সুবিধা ও বিভিন্ন রিসোর্স শেয়ার করার জন্য আপনাকে ও আপনার টিমকেও ধন্যবাদ জানাই।
এই কথোপকথনে উল্লেখ করা Meta ও Instagram-এর বিভিন্ন টুল ও রিসোর্স সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং আরও অনেক কিছুর জন্য, নিচে উল্লেখ করা রিসোর্সগুলো দেখুন।