ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ঘটনা এখন বাস্তবে ঘটছে: মিডিয়া লিটারেসির মাধ্যমে জেনারেটিভ AI বোঝা
Meta-র জন্য এটি NAMLE (ন্যামলে) তৈরি করেছে
31 মে, 2024
আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন, সবাই আজকাল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) নিয়ে কথা বলছেন। AI সর্বব্যাপী হওয়ার কারণে, যা আগে শুধুমাত্র কল্পবিজ্ঞান সিনেমার ধারণা ছিল, তা এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি বড় অংশ হয়ে উঠেছে। আপনি হয়তো আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তান যেসব সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন সেগুলো বুঝতে শুরু করেছেন, আর ইতিমধ্যেই আপনার মুখোমুখি এসে পড়েছে এই নতুন প্রযুক্তি। প্রযুক্তির অগ্রগতি প্রতিদিনই হচ্ছে, আর এই অগ্রগতির সাথে তাল মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন বিশেষত সেইসব মা-বাবারা যাদের নিজেদের এই প্রযুক্তিগুলো শিখে নেওয়ার পাশাপাশি সন্তানদেরও তা শেখাতে হচ্ছে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নতুন কিছু নয়। প্রথম AI প্রোগ্রামটি 1956 সালে লেখা হয়েছিল! ঠিকই শুনেছেন, অর্থাৎ 60 বছরেরও বেশি আগে তা লেখা হয়েছিল! আজ আমাদের বিশ্বে, AI প্রযুক্তি বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ওয়েবসাইট খোঁজা। বানান পরীক্ষা। চ্যাটবট। ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট। সোশ্যাল মিডিয়া অ্যালগরিদম। প্রস্তাবিত ভিডিও লিস্ট। মানুষের বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন হয় এমন কাজ করতে, কম্পিউটার ব্যবহার করা একটি সাধারণ ব্যাপার। তাহলে আজকাল আমাদের সাংস্কৃতিক কথোপকথনের বড় অংশে AI রয়েছে কেন?
প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি হলো জেনারেটিভ AI নামের এক ধরনের AI, যা নিয়ে এখন অনেক বেশি আলোচনা হচ্ছে। জেনারেটিভ AI হলো এমন এক ধরনের AI, যা টেক্সট, ছবি, অডিও ও ভিডিও সহ বিভিন্ন কনটেন্ট জেনারেট করে। আপনি যদি বানান পরীক্ষা ব্যবহার করেন বা ব্যাকরণ দুইবার পরীক্ষা করেন, তাহলে সম্ভবত আপনি জেনারেটিভ AI ব্যবহার করেছেন। আপনি "ডিপফেক"-এর কথাও শুনে থাকতে পারেন, যাতে ভিজ্যুয়াল কনটেন্টে হেরফের করতে AI ব্যবহার করা হতে পারে, যেমন, একজনের শরীরে আরেকজনের মুখ চাপিয়ে দেওয়া। অথবা হয়তো আপনার কিশোর বয়সি সন্তানের স্কুল নতুন চ্যাটবট অ্যাপ শিক্ষার্থীরা কীভাবে ব্যবহার করবেন তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে, যাতে সেই অ্যাপগুলো দিয়ে অল্প বয়সি ছেলেমেয়েরা স্কুলের দেওয়া বাড়ির কাজ করার সময় টেক্সট কনটেন্ট জেনারেট করতে পারেন। জেনারেটিভ AI এখন প্রযুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মা-বাবারা যেন জানেন এটি কীভাবে কাজ করে, এর সুবিধা ও সমস্যা বোঝেন এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করার সময় মিডিয়া সংক্রান্ত দক্ষতার সাহায্যে কিশোর-কিশোরীদের সহায়তা করতে পারেন।
জেনারেটিভ AI কীভাবে কাজ করে (সহজ ভাষায়)?
জেনারেটিভ AI সারা বিশ্বে ইতিমধ্যেই থাকা ডেটা প্রচুর পরিমাণে গ্রহণ করে এবং প্যাটার্ন ও পরিকাঠামোর জন্য তা স্ক্যান করে। তারপর এটির সিস্টেম কী চিনতে শিখেছে তার ভিত্তিতে এটি নতুন কনটেন্ট ও ডেটা তৈরি করার নিয়ম তৈরি করে। মানুষ সিস্টেমকে প্রশিক্ষণ দেয়, যাতে এটি এই প্যাটার্ন ও পরিকাঠামোগুলো শিখতে পারে। উদাহরণ, আপনি ঘুরতে যাওয়ার কোনো গন্তব্য সম্পর্কে তথ্যের একটি ডেটাসেটে AI-কে প্রশিক্ষণ দিতে পারেন এবং সেই জায়গায় গিয়ে থাকলে করণীয় বিষয় সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর জেনারেট করতে পারেন। উত্তর সঠিক বলে মনে হতে পারে, তবে তা যে সব সময়ই সঠিক হবে এর কোনো মানে নেই। অবশ্যই মনে রাখবেন, জেনারেটিভ AI-কে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য কোন তথ্য ও ডেটা ব্যবহৃত হয়েছে, তার উপর নির্ভর করেই জেনারেটিভ AI আউটপুট দেবে।
জেনারেটিভ AI-এর সুবিধা কী?
নতুন প্রযুক্তি আমাদের কাছে অত্যন্ত রোমাঞ্চকর ও মূল্যবান হতে পারে। তা আমাদের আরও বেশি দক্ষ ও সৃজনশীল করতে পারে। এখানে তিনটি বিবেচনা করার মতো সুবিধা রয়েছে:
জেনারেটিভ AI নতুন ধারণা ও সম্ভাবনা জেনারেট করে। কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে, জেনারেটিভ AI তার সৃজনশীলতা বাড়াতে পারে, যেমন, গল্প লেখার সময়। এটি নতুন ধারণা তৈরি করতে এবং সীমানা পরিবর্তন করতেও সাহায্য করতে পারে।
শিক্ষাক্ষেত্রে জেনারেটিভ AI ব্যবহার করলে, ব্যক্তি বিশেষে তা আলাদা আলাদা প্রয়োজন মেটাতে সাহায্য করে। আলাদা আলাদা শিক্ষার্থীর জন্য পড়াশোনার অনুশীলনী পরিকল্পনা বা কার্যকলাপ কাস্টমাইজ করতে এটি শিক্ষকদের জন্য একটি অবিশ্বাস্য হাতিয়ার। বিশেষত স্নায়ুবিকাশকারী বা প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি নতুন ভাষা শেখার অনুশীলন করতে ও নতুন দক্ষতা শিখতে সাহায্য করতে অথবা আপনার কিশোর বয়সি সন্তান স্কুলে যা শিখছেন তাতে অতিরিক্ত সাহায্য করতে পারে। আপনার কিশোর বয়সি সন্তান তার স্কুলের অ্যাসাইনমেন্টের জন্য অনুমোদিত প্রযুক্তি টুল ব্যবহার করছেন কি না তা নিশ্চিত করতে, তিনি যে তার শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন তা দেখা জরুরি।
AI টুল প্রায়শই সময় বাঁচায় এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ায়। জেনারেটিভ AI-এর ক্ষেত্রেও এই কথাটি সত্যি। কর্পোরেশন ও সংগঠনগুলো ইতিমধ্যেই জেনারেটিভ AI ব্যবহার করছে, যাতে কর্মীরা সাধারণ কাজগুলো কম সময়ে করতে পারেন এবং বেশি চিন্তাভাবনা ও কৌশলগত কাজে মনোযোগ দিতে পারেন। যেমন, কিছু কোম্পানি এখন জেনারেটিভ AI চ্যাটবট ব্যবহার করে 24/7 গ্রাহক সহায়তা দেয়।
জেনারেটিভ AI-এর সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ কী?
বর্তমান সময়কালটি জেনারেটিভ AI বোঝার প্রথম পর্ব এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বিজনেস, যোগাযোগ ব্যবস্থা বা নাগরিক জীবনের মতো যেকোনো ক্ষেত্রে জেনারেটিভ AI-এর প্রভাব মূল্যায়ন করতে কিছুটা সময় লাগবে। জেনারেটিভ AI ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা আছে, আমরা তা জানি। এখানে তিনটি বিবেচ্য সমস্যা রয়েছে:
আমরা জানি জেনারেটিভ AI পক্ষপাতিত্ব করতে পারে, কারণ প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত ডেটাসেটগুলো নিম্নমানের, গতে বাঁধা ও/বা পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে। মনে রাখবেন, জেনারেটিভ AI শুধুমাত্র প্রশিক্ষণ পাওয়া নির্দিষ্ট ডেটাসেট অনুযায়ীই শেখার প্যাটার্ন তৈরি করতে পারে, তাই সেটির তৈরি করা তথ্যের গুণমানও প্রশিক্ষণ পাওয়া ইনপুটের গুণমানের মতোই হয়।
জেনারেটিভ AI টুল যেহেতু ইন্টারনেট থেকে তথ্য নিতে পারে, তাই কিশোর-কিশোরীদের তাদের সাহায্যের উপায়গুলো উদ্ধৃত করার বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। কিছু জেনারেটিভ AI টুলে উদ্ধৃতি থাকে, তবে সবগুলোতে তা থাকে না। এবং কিছু উদ্ধৃতি যা জেনারেটিভ AI প্রোগ্রাম উল্লেখ করে, তা সর্বদা সঠিক হয় না। আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তানকে AI-এর জেনারেট করা তথ্য সম্পর্কে এবং কোনো কাজে AI কনটেন্ট ব্যবহার করার জন্য তার কাছে অনুমতি থাকলে, সেই বিষয়ে সচেতন থাকতে সাহায্য করুন।
তথ্য-পরীক্ষা করা জেনারেটিভ AI প্রক্রিয়ার অংশ নয়। পূর্বশর্ত হিসাবে ডেটার বিশ্বাসযোগ্যতা ও নির্ভুলতা, অ্যালগরিদম বিবেচনা করতে পারে না। এক্ষেত্রে জেনারেট করা কনটেন্ট ব্যবহার করা বা শেয়ার করার আগে, সেটির বিশ্বাসযোগ্যতা পরীক্ষা করতে হবে। কিছু কোম্পানি এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছে।
রেডিও ট্রান্সমিটার থেকে শুরু করে ইন্টারনেট অপারেটিং সিস্টেম পর্যন্ত সব মৌলিক প্রযুক্তির মতোই, AI মডেলগুলোও বিভিন্নভাবে প্রচুর ব্যবহার করা হবে, তার কিছুটা আন্দাজ করা যায় আবার কিছুটা আন্দাজের বাইরে। এবং প্রতিটি প্রযুক্তির মতো, জেনারেটিভ AI-এর সঙ্গে সম্পর্কিত নিরাপত্তা, প্রাইভেসি, প্রামাণিকতা, কপিরাইট ও নীতির বিষয়গুলো আমাদের বিবেচনা করা চালিয়ে যেতে হবে।
AI নেভিগেট করার বিষয়ে সাহায্য পেতে, আপনি কীভাবে মিডিয়া লিটারেসির দক্ষতা ব্যবহার করবেন
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বুঝতে, মিডিয়া সম্পর্কিত জ্ঞান বা মিডিয়া লিটারেসি থাকা প্রয়োজন। মিডিয়া লিটারেসি হলো সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবহার করে কোনো কিছু অ্যাক্সেস, বিশ্লেষণ, মূল্যায়ন, তৈরি ও সম্পাদন করার ক্ষমতা। মিডিয়া লিটারেসি মানুষকে সমালোচনামূলক চিন্তাবিদ, নির্মাতা, কার্যকর যোগাযোগকারী ও সক্রিয় নাগরিক হতে সাহায্য করে। মিডিয়া লিটারেসির মূল বিষয় হলো আপনি যে তথ্য ব্যবহার ও তৈরি করছেন, সেই সম্পর্কে কীভাবে প্রশ্ন করবেন ও গভীরভাবে ভাববেন, তা জানা। এটি সব তথ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ, যার মধ্যে জেনারেটিভ AI-এর জেনারেট করা তথ্যও রয়েছে।
অনেকেই প্রশ্ন করেন, "A.I. দিয়ে ফটো, ভিডিও ও অডিও ম্যানিপুলেট করা হলে, আমি কীভাবে বুঝব সেটা আসল কি না?" মিডিয়া লিটারেসির শিক্ষা আমাদেরকে "বাস্তব বা নকল", "তথ্য বা কল্পকাহিনী" অথবা "সত্যি ও মিথ্যা"-র বাইরে দেখতে সাহায্য করে এবং আমরা যা দেখছি ও শুনছি তা আরও সূক্ষ্মভাবে উপলব্ধি করানোর চেষ্টা করে।
আপনি নিজের সোশ্যাল মিডিয়া ফিড স্ক্রোল করুন বা ইন্টারনেটে ভিডিও দেখুন যাই করুন না কেন, সেখানে আপনি প্রশ্ন করতে পারেন এবং সেই প্রশ্ন গভীর বিশ্লেষণের দিকে নিয়ে যেতে পারে। উদাহরণ:
এটি কে বা কারা তৈরি করেছেন?
এটি কেন তৈরি করা হয়েছিল?
আমি কোন বিষয়ে ভাবি বলে এটি চায়?
গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, এমন কী জানা বাকি আছে?
আমার এটি কেমন লাগে?
এটি কতটা বিশ্বাসযোগ্য (এবং আপনি কীভাবে তা জানেন?)
মনে রাখবেন: আমরা যে কনটেন্ট ব্যবহার ও তৈরি করি, তা জেনারেটিভ AI দিয়ে জেনারেট করা হোক বা না হোক, সেই সম্পর্কে প্রশ্ন করাটাই আদর্শ পদক্ষেপ হওয়া উচিত। সব তথ্যই বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করা উচিত।
জেনারেটিভ AI সম্পর্কে আমার কিশোর-কিশোরী সন্তানের সঙ্গে কীভাবে কথা বলব?
আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তান ইতিমধ্যেই হয়তো জেনারেটিভ AI সম্পর্কে জানেন, তবে কনটেন্ট কোথা থেকে আসে ও কে বা কারা তৈরি করেছেন সেটা তিনি নাও বুঝতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি কিশোর-কিশোরী সন্তানের সঙ্গে এই সম্পর্কে খোলা মনে কথা বলেন এবং তার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চান। উদাহরণ:
আমি জেনারেটিভ AI সম্পর্কে পড়ছি। এই বিষয়ে আপনি হয়তো আমার চেয়ে বেশি জানেন। এটি কী আমি তা বুঝতে চাইছি, তাই এই বিষয়ে আপনি কী ভাবেন সেটা জানতে চাই। আপনি কি আমায় বলতে পারবেন যে এটি কীভাবে কাজ করে?
বিশেষত, জেনারেটিভ AI কীভাবে তার শিক্ষাকে প্রভাবিত করতে পারে, তা জানা জরুরি। আপনি কিছু প্রশ্ন করতে পারেন, যেমন:
আপনার কাছে স্কুলে জেনারেটিভ AI ব্যবহার করার অনুমতি আছে কি?
এটি ব্যবহার করা সম্পর্কে তোমার স্কুলে কোনো নিয়ম আছে কি?
স্কুলের কাজে এটি থেকে সাহায্য পান কি?
আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তান জেনারেটিভ AI সম্পর্কে তার স্কুলের নিয়ম না জানলে, তার কাছ থেকে জানতে চান আপনি তার শিক্ষক বা অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন কি না। কিছু স্কুল সৃজনশীল উপায়ে জেনারেটিভ AI ব্যবহার করছে। শিক্ষাগত সততার ঝুঁকির কারণে, অন্যান্য স্কুলে এই সম্পর্কে কঠোর নিয়মাবলী আছে।
কোনো নতুন প্রযুক্তি আসলে, সেটির ব্যবহার ও প্রভাব সম্পর্কে আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তানের সঙ্গে কথা বলুন। প্রশ্ন করুন। শুনুন। তার কাছ থেকে ও তার সঙ্গে থেকে শিখুন। এই রিসোর্সটি একসঙ্গে পড়ুন! নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, আপনাকে অবশ্যই এতে সময় দিতে হবে, ধৈর্য ধরতে হবে ও কৌতূহলী হতে হবে।