কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সহনশীলতা তৈরির গুরুত্ব



Sameer Hinduja (সমীর হিন্দুজা) এবং Justin W. Patchin (জাস্টিন ডব্লিউ. প্যাটচিন)

সহনশীলতা হলো "পরিস্থিতি ভালো করার ক্ষমতা, প্রতিকূলতার সাথে সফলভাবে খাপ খাইয়ে নেওয়ার এবং গুরুতর মানসিক চাপ… বা বর্তমান বিশ্বের চাপ থাকা সত্ত্বেও সামাজিক ও একাডেমিক দক্ষতার বিকাশ।"1 অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা নিঃসন্দেহে বড় হওয়ার সাথে সাথে তাদের স্কুলে, তাদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ও তাদের সামাজিক জীবনে প্রতিকূলতার মুখোমুখি হবেন। দুর্ভাগ্যবশত, সহনশীলতার গুরুত্ব প্রায়ই উপেক্ষা করা হয়। জীবন বিভিন্ন সংগ্রামে ভরা, যার মধ্যে অনেকগুলোই সম্পর্কযুক্ত হয়। অনেক মা-বাবাই তাদের সন্তানদের যে কোনো ধরনের কষ্ট থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন, পরিস্থিতির সাথে তাদের মোকাবিলা করতে না দিয়ে তাদের হয়ে কথা বলেন এবং কঠিন আর গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় মুহূর্তগুলোতে তাদের নিজে থেকে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুমতি না দিয়ে নিজেরা হস্তক্ষেপ করেন। তবে সব সময়ই এমনটা করলে, আপনার কিশোর বা কিশোরী সন্তানের জন্য তা ক্ষতিকর হতে পারে এবং তার ফলে তার প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে তা বাধা দিতে পারে আর এমনটা করা হলে তাদের সর্বদা রক্ষা করাও সম্ভব হবে না।


সহনশীলতা ও সাইবার বুলিয়িং বা সাইবার হেনস্থা সংক্রান্ত গবেষণা

আমাদের গবেষণা2 অনুসারে দেখেছি যে কোনো কিশোর-কিশোরীর যত বেশি সহনশীলতা ছিল, সাইবার বুলিয়িংয়ের ক্ষেত্রে তার প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে তত কম ছিল। এছাড়াও, শিক্ষার্থীরা দুর্ব্যবহারের মুখোমুখি হলে মা-বাবা ও কেয়ারগিভাররা (পরিচর্যাকারী) তাদের কাছ থেকে যা আশা করেন, খুব বেশি সহনশীলতা থাকা কিশোর-কিশোরীরা ঠিক সেই ভাবেই সব কিছু পরিচালনা করতে পেরেছিলেন। তারা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে সেই ঘটনার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তারা সম্পর্কিত সাইটে/অ্যাপে সেই ঘটনার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তারা নিজেদের স্ক্রীননেম পরিবর্তন করেছিলেন, আক্রমণকারীকে ব্লক করেছিলেন বা লগ আউট করেছিলেন। অন্যদিকে, যাদের সহনশীলতার মাত্রা খুব কম ছিল, সাইবার বুলিয়িংয়ের সময় তাদের কিছুই না করার সম্ভাবনা বেশি ছিল।


প্রতিকূলতাকে ইতিবাচক ভাবে মোকাবিলা করে সহনশীলতা তৈরি করা

মনে করুন, আপনার কিশোর বয়সী সন্তান তার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে কোনো আঘাতমূলক কমেন্ট পেয়েছেন। গতানুগতিক সম্ভাবনা হিসাবে, তিনি ভেঙে পড়তে পারেন এবং নিজেকে বলতে শুরু করতে পারেন যে তিনি একজন "লুজার বা হেরো" আর তার একা থাকাই উচিত এবং এই ধরনের হেনস্থা তার জীবনে অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং তার প্রতি অধিকাংশ মানুষের অনুভূতিও এমনটাই হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে সাধারণত, যা ঘটেছে সেই বিষয়ে চিন্তা করে সেটিকে ইতিবাচক ভাবে মিটমাট করলে তার পক্ষে ভালো হবে। তিনি নিজেকে বোঝাতে পারেন, যিনি তার সাথে সাইবার বুলিয়িং বা হেনস্থা করছেন তিনি হয়ত নিজে নিরাপত্তাহীনতা ও ব্যক্তিগত সমস্যায় ভুগছেন এবং অন্যদের অপদস্থ করতে তার হয়ত ভালো লাগে। তিনি নিজেকে বোঝাতে পারেন যে আক্রমণকারীর মতামত ও কাজ সামগ্রীকভাবে ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয় আর এই ঘটনাটাও মনে রাখার মতো "স্মরণীয়" নয়।

এখানেই মা-বাবা আর কেয়ারগিভারের (পরিচর্যাকারী) ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয় এবং উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে শান্ত হয়ে তার সাথে কথা বললে তা খুব উপযোগী হতে পারে। কিশোর-কিশোরীদের বিশ্বাসে কিসের অভাব আছে, আমরা যখন তাদের নিজে থেকে তা নিরপেক্ষভাবে বুঝতে সাহায্য করতে পারি, তখন অস্বাস্থ্যকর চিন্তার ধরন বদলাতে, তা করা আটকাতে এবং সেই বিষয়ে বিশ্লেষণ করতে তাদের দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব হয়।3 তারা তখন স্বাস্থ্যকর আর উপকারী চিন্তাভাবনার সাহায্যে নিজেদের বদলাতে পারেন। এটি তাদের বর্তমানে ও ভবিষ্যতে জীবনের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব রাখতে এবং সেই পথ অবলম্বন করতে সাহায্য করে।


কেয়ারগিভাররা (পরিচর্যাকারী) কীভাবে সিনেমা আর বইয়ের সাহায্যে সহনশীলতার প্রচার করতে পারেন

অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা যেহেতু বিশেষত পপ কালচার আর সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে খুব বেশি জড়িত থাকেন, তাই মা-বাবারা ও কেয়ারগিভাররা (পরিচর্যাকারী) সহনশীলতার বিষয়ে শেখাতে সিনেমা আর বই ব্যবহার করতে পারেন। আমরা স্বভাবতই গল্পের সাথে একাত্ম হয়ে যাই এবং সারাজীবনে আমরা যা শুনেছি, দেখেছি বা পড়েছি তা দ্বারা গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হই। অনেক শিশুই প্রাইমারি স্কুলে রূপকথার গল্প আর গ্রীক পৌরাণিক কাহিনীতে প্রভাবিত হন, বয়ঃসন্ধিকালে ও যৌবনে সুপারহিরোর কাহিনীতে, পরবর্তী জীবনে খেলাধুলা আর যুদ্ধ সংক্রান্ত সিনেমার মাধ্যমে প্রভাবিত হন এবং এই গল্পগুলোর প্রতিটিই তাদের নিজেদের বেঁচে থাকতে অনুপ্রাণিত করতে পারে। নিচে বয়সের স্তরের ভিত্তিতে আমাদের কিছু পছন্দের তালিকা রয়েছে।

সহনশীলতা শেখানোর সিনেমা ও শো:

মিডল স্কুল

  • Facing the Giants (ফেসিং দ্য জায়ান্টস)
  • Finding Forrester (ফাইন্ডিং ফরেস্টার)
  • Greatest Showman (গ্রেটেস্ট শোম্যান)
  • The 33 (দ্য থার্টি থ্রি)
  • The Florida Project (দ্য ফ্লোরিডা প্রজেক্ট)
  • The Rescue (দ্য রেসকিউ)

হাই স্কুল

  • 127 Hours (127 আওয়ার্স)
  • Atypical (আটিপিক্যাল)
  • Creed (ক্রীড)
  • Penguin Bloom (পেঙ্গুইন ব্লুম)
  • Rabbit-Proof Fence (র‍্যাবিট-প্রুফ ফেন্স)
  • When They See Us (হোয়েন দে সি আস)

সহনশীলতা শেখার বই:

মিডল স্কুল

  • El Deafo (এল ডেফো)
  • Fish in a Tree (ফিশ ইন আ ট্রি)
  • Sorta Like a Rock Star (সর্টা লাইক আ রক স্টার)
  • The Boy who Harnessed the Wind (দ্য বয় হু হার্নেসড দ্য উইন্ড)
  • The Dot (দ্য ডট)
  • The Hunger Games (দ্য হাঙ্গার গেমস)

হাই স্কুল

  • A Long Walk to Water (আ লং ওয়াক টু ওয়াটার)
  • Fast Talk on a Slow Track (ফাস্ট টক অন আ স্লো ট্র্যাক)
  • Hatchet (হ্যাচেট)
  • Of Human Bondage (অফ হিউম্যান বন্ডেজ)
  • The Rules of Survival (দ্য রুলস অফ সার্ভাইভাল)
  • Whirligig ((উইলিগিগ)

যে কোনো অনলাইন (বা অফলাইন!) প্রতিকূলতাকে কীভাবে আরও ইতিবাচক ভাবে মোকাবিলা করা যায়, সেই বিষয়ে মা-বাবারা ও কেয়ারগিভাররা (পরিচর্যাকারী) কিশোর-কিশোরীদের সাহায্য করলে তাদের সহনশীলতা জোরদার করতে ভালো কাজ করতে পারবেন এবং যে গল্পগুলো কিশোর-কিশোরীদের মনোভাব, কাজ ও জীবনকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে তাদের সেই গল্প সরবরাহ করতে মিডিয়ার ব্যবহার তালিকাভুক্ত করার মাধ্যমে তা অনুসরণ করা যেতে পারে। এমনটা করলে তাদের অনলাইন অভিজ্ঞতা নিয়ন্ত্রণ করতে তারা সাহায্য পাবেন এবং ক্ষতি থেকে নিজেদেরকে আরও ভালো ভাবে রক্ষা করতে পারবেন। এছাড়াও, এই উপায়ে সহনশীলতা তৈরি করলে তা আপনার সন্তানের আত্মবিশ্বাস, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও উদ্দেশ্য বোধকে শক্তিশালী করবে এবং এই সব কিছুই অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের সুস্থ বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

1 হেন্ডারসন, এন. এবং মিলস্টেইন, এম. এম. (2003). রেসিলিয়েন্সি ইন স্কুলস: মেকিং ইট হ্যাপেন ফর স্টুডেন্টস অ্যান্ড এডুকেটর্স (স্কুলে সহনশীলতা: শিক্ষার্থী ও শিক্ষাবিদদের জন্য সম্ভবপর করা)।
থাউজেন্ড ওকস, সিএ: Sage Publications (Corwin Press)

2 হিন্দুজা, এস. এবং প্যাটচিন, জে. ডব্লু. (2017). কাল্টিভেটিং ইউথ রেসিলিয়েন্স টু প্রিভেন্ট বুলিয়িং অ্যান্ড সাইবার বুলিয়িং ভিক্টিমাইজেশন (হেনস্থা ও সাইবার হেনস্থা প্রতিরোধে অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের সহনশীলতা গড়া)। Child Abuse & Neglect (চাইল্ড অ্যাবিউজ অ্যান্ড নেগলেক্ট, 73, 51-62.

3 অ্যালবার্ট এলিস'এর "এবিসি (অ্যাডভার্সিটি, বিলিফস অ্যান্ড কনসিকোয়েন্সেস)" (এবিসি (প্রতিকূলতা, বিশ্বাস ও ফলাফল) মডেলের ভিত্তিতে। অনুগ্রহ করে এলিস, এ. (1991) দেখুন। র‍্যাশনাল-ইমোটিভ থেরাপি (RET) (যৌক্তিক-আবেগজনিত থেরাপি)-র সংশোধিত এবিসি সংস্করণ। র‍্যাশনাল-ইমোটিভ অ্যান্ড কগনিটিভ-বিহেভিয়ার থেরাপি জার্নাল (যৌক্তিক-আবেগজনিত এবং জ্ঞানীয়-আচরণ থেরাপির পত্রিকা), 9(3), 139-172.

আপনার লোকেশন হিসাবে নির্দিষ্ট কনটেন্ট দেখতে আপনি কি অন্য কোনো দেশ বা অঞ্চল বেছে নিতে চাইবেন?
পরিবর্তন করুন