Justin W. Patchin (জাস্টিন ডব্লু. প্যাটচিন) এবং Sameer Hinduja (সমীর হিন্দুজা)
আপনি যদি জানতে পারেন আপনার কিশোর বয়সি সন্তান অনলাইনে অন্যদের হেনস্থা করেছেন তাহলে, আপনার কী করা উচিত? বিভিন্ন দিক থেকেই, আপনার কিশোর বয়সি সন্তান যদি হেনস্থার টার্গেট হন তার চেয়ে এই পরিস্থিতি আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। এটা মেনে নেওয়া কঠিন হতে পারে যে আপনার কিশোর বয়সি সন্তান কাউকে বেদনাদায়ক কিছু বলেছেন বা তার বিরুদ্ধে বেদনাদায়ক কিছু করেছেন, তবে খোলা মনে এই বিষয়ে নজর রাখুন। একজন মা/বাবা অথবা কেয়ারগিভার হিসাবে, বাস্তবতা স্বীকার করুন যে আপনি নিজের কিশোর বয়সি সন্তানকে ভালো কিছু শেখানোর সর্বাধিক চেষ্টা করলেও সব কিশোর-কিশোরীই নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে খারাপ কিছু করতে পারেন। শুরুতেই, মা-বাবা ও কেয়ারগিভারদের এই সমস্যাটিকে অন্যান্য সমস্যার মতোই শান্ত আর বিচার না করার মনোভাব নিয়ে দেখতে হবে। রেগে গেলে (যেখানে প্রথমেই আপনার রাগার সম্ভাবনা থাকবে), গভীর শ্বাস নিন আর কিছুটা শান্ত হলে সমস্যাটি আবার দেখুন। আপনি বর্তমান পরিস্থিতিতে ঠিক যেভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন, ভবিষ্যতে আপনার কিশোর বয়সি সন্তানেরও আপনার সাথে সেই ভাবেই প্রতিক্রিয়া জানানোর বা আচরণ করার সম্ভাবনা থাকে।
কী ঘটেছে তা জানুন
প্রথমত, আপনার এটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে ঠিক কী ঘটেছে। কাকে টার্গেট করা হয়েছে? টার্গেট করা ব্যক্তি, সাক্ষী বা হেনস্থাকারী হিসাবে অন্য কেউ জড়িত ছিলেন কি? ঘটনাটি কত সময় ধরে চলছে? সমস্যাটির বিষয়ে জানার জন্য কথোপকথনের কোনো ইতিহাস আছে কি? ক্ষতিকর কাজের(কাজগুলোর্) অনুপ্রেরণা আর উৎস বা কারণ কী ছিল? যা ঘটেছে, সেই সম্পর্কে যতটা সম্ভব জানার চেষ্টা করুন। আপনার কিশোর বয়সি সন্তানের সাথে কথা বলুন। ঘটনাটি সম্পর্কে তার মতামত শুনুন। আশা করি তিনি সব কথা খুলে বলবেন আর সত্যি ঘটনার অনেকটাই বলবেন, তবে প্রায়শই এমনটা হবে না। এই কারণে আপনাকেও বাস্তবে ঘটনাটি কী ঘটেছিল, তা যাচাই করে জানতে হবে। অনেক কিশোর-কিশোরিই সাইবার বুলিয়িং এই কারণে করেন যে অন্য কেউ প্রথমে তার সাথে তা করেছিলেন, তাই সেটার প্রতিশোধ নিতে তিনি এমনটা করেছিলেন। আপনার কিশোর বয়সি সন্তান যে তার সহ-শিক্ষার্থীদের সাথে কোনো সমস্যা হলে, সেই বিষয়ে আপনার সাথে আলোচনা করতে পারবেন তাকে আগে সেই ভরসা দিন। এমন ভরসা পেলে আশা করি, পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আগেই আপনার সাথে আলোচনা করে আপনার সন্তান সেই ঝগড়ার সমাধান করতে পারবেন।
সাইবার হেনস্থা করা থেকে আপনার কিশোর বয়সের সন্তানকে থামানোর পরামর্শ
যুক্তিসম্মত পরিণতির বিষয়ে ভালো করে বোঝান
প্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে, আমরা জানি যে প্রতিটি আচরণেরই ইতিবাচক ও নেতিবাচক পরিণতি থাকে। স্বাভাবিক পরিণতি হলো এমন কিছু যা কোনো আচরণের ফলে স্বাভাবিকভাবে বা আপনা-আপনি (মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই) ঘটে। যেমন, কেউ গরম স্টোভের বার্নারের উপর হাত রাখলে, তার হাত পুড়ে যাবে। এমন কিছু স্বাভাবিক পরিণতি আছে, যা খুব বেশি ঝুঁকির হয়। যেমন, কোনো কিশোর বা কিশোরী মাতাল হয়ে গাড়ি চালালে তার দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এবং তাতে তার নিজের বা অন্য করোর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই ধরনের আচরণের ক্ষেত্রে, যখন যুক্তিসম্মত পরিণতি সরাসরি সম্পর্কযুক্ত সম্ভাব্য ঝুঁকির সাথে জড়িত থাকে, তখন যুক্তিসম্মত পরিণতির সম্পর্কে জানিয়ে সেই সংক্রান্ত সম্ভাব্য স্বাভাবিক পরিণতি আটকানো ভালো হয়। আমরা কখনই চাই না যে কিশোর-কিশোরীরা মদ্যপান করে গাড়ি চালান এবং তারা যদি মদ্যপান করে ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ করেন তাহলে কিছু সময়ের জন্য তাদের গাড়ি না দেওয়া বা তাদের হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে গাড়ি দুর্ঘটনায় আক্রান্তদের দেখানো উচিত কাজ হতে পারে। কারণ, এমন আচরণের ক্ষেত্রে সেটির পরিণতি খুব তাড়াতাড়ি ঘটে (যেহেতু স্বাভাবিক পরিণতি প্রায়শই সাথে সাথেই ঘটে)। তাই, আপনার কিশোর বয়সের সন্তান যেন কোনো শাস্তি আর সেটি যে আচরণের সাথে সম্পর্কযুক্ত, তা অবশ্যই স্পষ্ট করে বুঝতে পারেন। অনুপযুক্ত অনলাইন অ্যাক্টিভিটির জন্য কিশোর-কিশোরীদের শাসন করার সময়ও একই পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। তারা যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যদের সম্পর্কে ক্ষতিকারক কমেন্ট করেন, তাহলে তাদের কয়েকদিনের জন্য ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করতে না দেওয়া উচিত কাজ হতে পারে। যেমন, তারা যদি কাউকে খারাপ ভাষার টেক্সট পাঠান, তাহলে তারা কিছু সময়ের জন্য তাদের ফোনের সুবিধা হারাতে পারেন। এমন আচরণ কেন অনুপযুক্ত, আপনার কিশোর বয়সের সন্তানকে অবশ্যই বোঝান এবং তা করলে স্বাভাবিক পরিণতি কী হতে পারে তা দেখান (যেমন, টার্গেট করা ব্যক্তির ক্ষতি, অনলাইন সুনামের ক্ষতি, স্কুলে স্থগিতাদেশ বা বহিষ্কার হওয়ার শাস্তি, কিশোর অপরাধের রেকর্ড ইত্যাদি)।
সাধারণত, সাইবার হেনস্থার ঘটনার ক্ষেত্রে কিশোর বয়সের সন্তানের প্রতিক্রিয়া কী এবং বিশেষত তিনি যদি হেনস্থাকারী হন, তাহলে সেই বিষয় মাথায় রেখেই মা-বাবাদের সাবধানে চিন্তাভাবনা করতে হয়। কেউই যেহেতু চান না যে এমন আচরণ চলতে থাকুক, তাই সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার হয়। প্রত্যেক কিশোর-কিশোরী আর প্রতিটি ঘটনাই আলাদা হয়। তাই, যা ঘটেছে সেই সম্পর্কে যতটা জানতে পারেন সেটিই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে পরবর্তী সময়ে সেই অনুযায়ী উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন।